মাইকিং করেও বাঘাইহাট বাজার বসেনি
সাজেক (রাঙামাটি)॥ এলাকার লোকজনকে মাইকিং করে বাজারে আসার আহ্বান এবং না আসলে জরিমানার হমকী সত্বেও আজ রবিবার বাঘাইহাট বাজারে লোক সমাগম হয়নি। সাজেক এলাকার জনগণ বাঘাইহাট বাজার অব্যাহত রেখেছেন। ২০১০ সালে সাজেকে পাহাড়ি গ্রামে সেনা-সেটলার হামলার পর দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে এ বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছিল। ঐ হামলায় কমপক্ষে দুই নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসী নিহত হন।
জানা যায়, গতকাল বাঘাইহাট বাজারের বাঙালিরা পাহাড়িদের বাজারে আসার আহ্বান জানিয়ে গাড়ি নিয়ে ব্যাপক মাইকিং করে। তাদের পাশাপাশি জনসংহতি সমিতির এম. এন. লারমা অংশের পরিচয় দিয়ে কিছু বিভ্রান্ত ও বিপথগামী সুবিধাবাদী পাহাড়ি যুবকও লোকজনকে বাজারে আসার জন্য চাপ এবং না আসলে প্রতি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে হুমকী দেয়।
এ ছাড়া আজ রবিবার সাকলে তারা কিছু বাঙালিসহ ৭/৮টি মোটর সাইকেল নিয়ে উজো বাজারে যায় এবং লোকজনকে বাজারে আসার জন্য চাপ দেয়।
কিন্তু তা সত্বেও আজ রবিবার হাটবার বাঘাইহাট বাজারে লোক সমাগম হয়নি। এলাকার লোকজন বাঘাইহাট বাজারে যাননি। দুপুর পর্যন্ত বাজার ছিল ফাঁকা। এমনকি অস্থায়ী বাঙালি ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিও ছিল কম। লোকসানের আশঙ্কায় তারাও বাজারে যাননি বলে এক বাঙালি ব্যবসায়ী জানান।
সাজেকের এক জুম্ম ব্যবসায়ী সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘মূলতঃ বাঘাইহাটের সেনারা দীর্ঘ দিন ধরে উজো বাজারটি ধ্বংস করে দিতে ও বাঘাইহাট বাজারের (বাঙালিদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণাধীন) চলমান বয়কট ভেঙে দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ কাজে সফল হওয়ার জন্য তারা সংস্কারবাদীদের একাংশকে কাজে লাগিয়ে এলাকার জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। তারা সংস্কারাবাদীদেরকে শেল্টার দিচ্ছে এবং তাদের চাঁদাবাজিতে সহযোগিতা করছে।’
তিনি বলেন, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে গড়ে ওঠা উজো বাজারকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। অতীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে, সফল হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।
ওই ব্যবসায়ী তার ভাষায় ‘সংস্কারবাদীদেরকে’ সেনাবাহিনী ও হামলাকারীদের হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত না হতে এবং জুম্ম জাতি বিরোধী আত্মঘাতী ধ্বংসের পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে জেএসএস এম. এন. লারমা গ্রুপের পরিচয়দানকারী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটা ঠিক আমাদের স্থানীয় এক নেতা বাঘাইহাট বাজার খুলে দেয়ার জন্য বাঙালিদের সহযোগিতা দিচ্ছে। তবে এতে আমাদের বেশীর ভাগ অংশের সমর্থন নেই। স্থানীয় ঐ নেতা যা করছেন তা আত্মঘাতী। তিনি মূলতঃ তার নিজের ব্যক্তি স্বার্থে এ কাজ করছেন।’
সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি ও উজো বাজার পরিচালনা কমিটির এক নেতা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, আমরাতো জানতাম ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এম এন লারমা গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং জেএসএস এম এন লারমা গ্রুপের নেতারা বাঘাইহাট বাজার বয়কটের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু তারপরও কেন তারা সমঝোতা বরখেলাপ করে এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী জঘন্য কাজ করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে তারা যেভাবে উলঙ্গভাবে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় হামলাকারী বাঙালিদের পক্ষে ওকালতি ও কাজ করছেন তাতে তারা আরো বেশী দ্রুত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। এতে কোন সন্দেহ নেই।’
তিনি বাজার বয়কট কর্মসূচী সফল করার জন্য এলাকার জনগণকে ধন্যবাদ জানান এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাঘাইহাট বাজার বয়কট চালু রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যে বুদ্ধপুদিদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে চলমান বাঘাইহাট বাজার বয়কট ভঙ্গ করবে সে সমাজ ও জাতির শত্রু বলে চিহ্নিত হবে।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।