মাটিরাংগায় শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরা’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা

0

মাটিরাংগা (খাগড়াছড়ি) : গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার উদ্যোগে শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরা’র ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার (১৮ মে) সকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি এলাকায় এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মরণ সভার থীম শ্লোগান ছিল ‘বীর শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, বাঁচার জন্য যারা মরতে প্রস্তুত পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার একমাত্র তাদেরই’।

স্মরণ সভার আগে শহীদ পঞ্চসেনের18.05.16, Ponchosentripura smronsova1 স্ত্রী চম্পা ত্রিপুরাসহ  ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ ও জনগণ অস্থায়ী স্মৃতিসমাধিতে পুষ্পস্তবক প্রদান করে এবং ১ মিনিট নিরবতা পালন ও স্যালুট দিয়ে শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।

স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন রণসা ত্রিপুরা। বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) মাটিরাঙ্গা থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা ও  খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সভাপতি কৃষ্ণচরণ ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন লক্ষীছড়ি থানা শাখার সভাপতি রেশমি মারমা, ইউপিডিএফএর সংগঠক মিঠুন চাকমা, আমতলী ইউনয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জরক্ক ত্রিপুরা, বর্তমান মেম্বার হিন্দু রঞ্জন ত্রিপুরা, শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরার ছোট ভাই ধন কিশোর ত্রিপুরা প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সুমন্ত ত্রিপুরা।

স্মরণ সভায় বক্তাগণ শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরার অবদান স্মরণ করে বলেন, মাটিরাংগা এলাকায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করতে তিনি অনেক কাজ করে গেছেন। তার শ্রম ও মেধা দিয়ে সংগঠনকে সাধারণ যুব সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হন। তার এই সাংগঠনিক কাজের অগ্রগতি দেখে এলাকার প্রতিক্রিয়াশীল অংশ ভীত হয়ে তাকে হত্যা করে।

বক্তারা বলেন, শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরাকে হত্যা করে যারা সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে রূদ্ধ করতে চেয়েছে তাদের সকল ধরণের অপপ্রচেষ্টা নস্যাত করে যুব ফোরামের নেতৃত্বে এলাকার যুব সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বক্তারা শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরার জীবন আদর্শকে ধারণ করে18.05.16, Ponchosentripura smronsova2 আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

স্মরণ সভায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন লক্ষীছড়ি শাখার সভাপতি বলেন, যে কোন নির্যাতিত জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে কারো মায়ের বুক খালি হয়, অনেক স্ত্রীকে স্বামী হারিয়ে বিধবা হতে হয়, অনেক পুত্রকে এতিম হতে হয়, পিতা হারান পুত্রকে, অনেককেই পঙ্গুত্ব বরণ করে দুঃসহ জীবন কাটাতে হয়। কিন্তু তারপরেও আমাদের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, যতদিন পর্যন্ত পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায় হবে না ততদিন পর্যন্ত আমরা হাল ছেড়ে দেব না। একদিন আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবোই হবো।

জরক্ক ত্রিপুরা বলেন, ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি হোক, এক ভাই আরেক ভাইকে গুলি চালাক তা আমরা চাই না। তিনি বলেন, ইউপিডিএফএর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আমরা দেখছি ইউপিডিএফ সবসময় জনগণের পাশে থেকে জনগণের ভুমিরক্ষার আন্দোলন সংগ্রামসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকে। তিনি ইউপিডিএফ’র অগ্রযাত্রা কামনা করে বলেন, জনগণের পাশে যে পার্টি থাকবে জনগণ সেই পার্টিকেই নিজেদের পার্টি হিসেবে বিবেচনা করবে।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা বলেন, যতদিন পার্বত্য চট্টগ্রামে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে ততদিন পঞ্চসেন ত্রিপুরার নাম জুম্ম জনগণের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি গোমতি এলাকায় শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরা স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য এলাকার যুবসমাজসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর সংগঠক মিঠুন চাকমা উপস্থিত জনগণের প্রতি শহীদ পঞ্চসেন ত্রিপুরার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, পঞ্চসেন ত্রিপুরাকে ২০১৩ সালের ১৮ মে মাটিরাংগার শুভরঞ্জন হেডম্যান পাড়ায় (গড়গড়িয়া) নিজ বাড়িতে সেনা-সৃষ্ট বোরকা পার্টির সন্ত্রাসীরা গুলি করে নির্মমভাবে খুন করে।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More