মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ে সেটলারদের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি, কয়েক শ’ পাহাড়ির ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ, ইউপিডিএফের নিন্দা

0
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নে সেটলার বাঙালিরা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করলে ৫টি পাহাড়ি গ্রামের আড়াই শতাধিক পরিবার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে জঙ্গলে ও ভারত সীমান্তে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।জানা যায়,গতকাল ৩১ জুলাই বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় কিছু সেটলার ফটকাবাজি ফুটিয়ে ‘সন্ত্রাসী এসেছে সন্ত্রাসী এসেছে’ বলে মাইকে চিকার দেয়। এরপর সাথে সাথে কয়েক শ’ সেটলার বাঙালি তাইন্দং বাজারে জড়ো হয়। রাত ১টার দিকে তারা মিছিল বের করে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। এতে পার্শ্ববর্তী হেডম্যান পাড়া, বগা পাড়া, পোমাং পাড়া, তানাক্কা পাড়া ও ৩নং কলিন্দ্র কার্বারী পাড়ার পাহাড়িদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক দেখা দেয়। এ সময় সেটলারদের আক্রমনের ভয়ে হেডম্যান পাড়ার ১৩০ পরিবারসহ পাঁচটি পাহাড়ি গ্রামের মোট ২৫৭ পরিবার গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে ১২৭ পরিবার ভারতের সীমান্তে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তবে বিজিবি’র নিরাপত্তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আজ ১ আগস্ট সকালে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসলেও হেডম্যান পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া ১৩০ পরিবার পাহাড়ি এখনো বাড়িতে ফিরে আসেনি। এলাকায় পাহাড়িদের মধ্যে এখনো চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এছাড়া সেটলার বাঙালিরা আজও তাইন্দং বাজারে মিছিল করতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেটলাররা পাহাড়ি যাত্রীদের গাড়িতে না তুলতে বাঙালি ড্রাইভারদের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে পাহাড়িরা ভয়ে তাইন্দং বাজারে যেতে পারছেন না।ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রদীপন খীসা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘গত ৮ জুলাই মাটিরাঙ্গার পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তির পর এ ধরনের ইচ্ছাকৃত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি অনাকাঙ্খিত ও অত্যন্ত দুঃখজনক।’

সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেটলারদের মধ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক অংশটি অতীতের মতো সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের জমি-জমা বেদখল করতে দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে তারা গত ফেব্রুয়ারী ও জুন মাসে গোমতি-তাইন্দং এলাকায় পাহাড়িদের গ্রামে বেশ কয়েকবার হামলা চালায়। সে সময়ও পাহাড়িরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে বাধ্য হয়।’

ইউপিডিএফ নেতা পাহাড়িদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সরকারী পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী কখনোই পাহাড়িদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, বরং তারাই নিরীহ পাহাড়িদের নিরাপত্তা হরণের সাথে জড়িত। এই অবস্থায় পাহাড়িদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব বাহিনী গঠনের কোন বিকল্প নেই।’

তিনি খাগড়াছড়ির সাংসদ যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার নীরব ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ি তথা ত্রিপুরাদের উপর একের পর এক হামলা, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং এর ফলে তাদের চরম দুঃখ দুর্দশার পরও তিনি সেখানে যাননি, তাদের খোঁজ খবর নেননি, তাদের পক্ষ হয়ে সংসদে বা মিডিয়ায় কথা বলা তো অনেক দূরের কথা।’ ইউপিডিএফ নেতা মাটিরাঙ্গার জনগণকে নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ ছাড়া বাঁচার কোন পথ নেই। ইউপিডিএফ যে কোন ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আপনাদের পাশে থাকবে।’

তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সেটলারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, হামলার ভয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া পাহাড়িদের নিরাপত্তার গ্যারান্টিসহ নিজ গ্রামে ফিরিয়ে আনা ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পাহাড়ি পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More