মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে আগামীকাল শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এবং সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদেবৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) আগামীকাল ২১শে ফেব্রুয়ারী মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে । আজ ২০ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক উমেশ চাকমার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়,বিগত ২০০০ সাল থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে। ২০০২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপমন্ত্রীর বরাবরেপ্রথম স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে। এরপর ২০০২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী উক্ত দাবিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। তৎসময়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পিসিপি‘র পেশকৃত দাবির প্রতি সমর্থন ও ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস সম্বলিত চিঠি প্রেরণ করা হলেও আজ পর্যন্ত এসব দাবি বাস্তবায়নে কোন সরকারই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশের জনগণের মহান আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলেও দেশের ৪৫টির অধিক ভিন্ন ভাষাভাষি সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ভাষা অনাদরে, অবহেলায় ও অবজ্ঞায় পড়ে রয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য কোন সরকার আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
বিবৃতিতে বলা হয়, পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে জোরপূর্বক বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করছে। এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও সরকার এসবের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তাই পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এ বছরও ২১ ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বিবৃতিতে অবিলম্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উত্থাপিত শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বাতিলপূর্বক সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়।
উল্লেখ্য, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিগুলো হলো- ১. পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা, ২. স্কুল-কলজের পাঠ্যপুস্তকে জাতিসত্তার প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বাদ দেয়া, ৩. পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের বীরত্ত্বব্যঞ্জক কাহিনী ও সঠিক সংগ্রামী ইতিহাস স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা, ৪. বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক রচনা বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা এবং ৫. পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়িদের জন্য বিশেষ কোটা চালু করা।