মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সিএইচটিনিউজ.কম
আজ ১০ নভেম্বর জুম্ম জাতীয় চেতনার পথপ্রদর্শক মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা) ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের এই দিনে একই দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সশস্ত্র হামলায় ৮ জন সহযোদ্ধাসহ তিনি নিহত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন।
এমএন লারমা ১৯৩৯ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার মাওরুম গ্রামে এক মধ্যবিক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চিত্ত কিশোর চাকমা সেই গ্রামেরই জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।তার মাতার নাম শুভাষিনী দেওয়ান।
এমএন লারমা ১৯৫৬ সালে সর্বপ্রথম জুম্ম ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৫৭ সালের পাহাড়ি ছাত্র সম্মেলনে তিনি বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ে আই,এ ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে আই,এ পাশ করেন। এরপর একই কলেজে তিনি বি,এ ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে নিরাপত্তা আইনে অধীনে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ প্রায় দুই বছরের অধিক কারাবরণ করার ৮ই মার্চ ১৯৬৫ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
তিনি ১৯৬৬ সালে দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বিএড পাশ করেন এবং ১৯৬৯ সালে এল, এল বি পাশ করে একজন আইনজীবী হিসাবে চট্টগ্রাম বার এসোসিয়েশনে যোগদান করেন।
এমএন লারমা ১৯৭০ সালে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তরাঞ্চল হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে তার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ী হন। একই বছর গঠিন হয় জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র উইং শান্তিবাহিনী । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে তৎকালীন সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি আত্মগোপন করেন এবং অনিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেন।
এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ জুন জনসংহতি সমিতির ২য় কংগ্রসে আদর্শগত ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জনসংহতি সমিতি শেষ পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত হয় এবং ১৯৮৩ সালের ১৪ জুন সর্বপ্রথম সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়। এতে বলি ওস্তাদ নিহত হন। এরপর ১০ই নভেম্বর প্রতিপক্ষের সশস্ত্র হামলায় ৮ সহযোগী সহ নিহত হন এম এন লারমা।
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু যে আদর্শ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে তিনি সংগ্রাম করে গেছেন তাঁর উত্তরসূরীরা (সন্তু লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতি) সেই আকাঙ্ক্ষার সাথে বেঈমানী করে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তির মাধ্যমে যে এমএন লারমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না তা বলাই বাহুল্য। তাই, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন প্রজন্মকে জুম্ম জনগণের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।
————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।