মানিকছড়িতে পাহাড়ি তরুণী ধর্ষণের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি পেশ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে মারমা তরুণীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণ, ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণের পর হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টামূলক শাস্তি এবং পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে খাগড়াছড়ি সদরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ ১০ মার্চ সোমবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) সহ খাগড়াছড়িতে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ‘খাগড়াছড়ি সদরের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ’-এর ব্যানারে তারা প্রথমে শাপলা চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন চলাকালে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ শাখার সভাপতি কইংজনা মারমা। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সমর্থিত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বিপুল চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের জেলা সভাপতি চাইহ্লাউ মারমা, জেএসএস(এমএন লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রূপম চাকমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের সদস্য কুঞ্জন জ্যোতি ত্রিপুরা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের জেলা আহ্বায়ক কৃষ্টি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা ও প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজ(প্রমাছাস) এর খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার সহ সভাপতি মংসাই মারমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিগত দিনের ধর্ষণের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত না হওয়া এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের উপর ধর্ষণ, নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বক্তারা পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে ৪ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীও রয়েছেন। প্রধানত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসা সেটলার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশ ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনা সদস্যরা এসব ধর্ষণ ও ধর্ষণের প্রচেষ্টার সাথে জড়িত। এসব ঘটনার কোন একটিরই সঠিক বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি। যার ফলে এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে।
স্মারকলিপিতে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের উপর এই যৌন সহিংসতাকে জাতিগত নির্যাতনের অংশ উল্লেখ করে বলেন, পাহাড়ি নারীরা ঘরে-বাইরে, বনে-জঙ্গলে, জুম ঘরে কর্মস্থলে কোথাও তারা নিরাপদ নয়। তারা নিরাপদে বাড়িতে একা থাকতে পারে না, বন থেকে লাকড়ি আনতে পারে না, কুয়া থেকে পানি আনতে পারে না, বিহারে- মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে পারে না, ক্ষেতে- খামারে কাজ করতে যেতে পারে না, গরু চড়াতে যেতে পারে না, পড়াশুনার জন্য স্কুলে, কলেজে যেতে পারে না। সবখানে ওঁৎপেতে থাকে মানুষরুপী নরপশুরা। তৎকালীন পাকিস্তানের হানাদার পাক-বাহিনী যেভাবে নারী ধর্ষণকে স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামেও বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী বর্তমানে তাই করছে বলেও তারা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেয়া স্মারকলিপিতে তারা চার দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো-১. অবিলম্বে সবিতা চাকমা, তুমাচিং মারমা, সুজাতা চাকমা, মালারুং ত্রিপুরার ধর্ষণকারীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল প্রকার নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, ২. অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে: ফেরদৌস ও তার দোসরদের বিচার করতে হবে, ৩. পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার ও সেটলারদের সমতলে সম্মানজনকভাবে পূনর্বাসন করতে হবে, ৪. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ মানিকছড়িতে এক পাহাড়ি তরুণী তিন সেটলার যুবক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। পরে মানিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালামের নেতৃত্বে স্থানীয় এলাকাবাসী তিন ধর্ষক মোটর সাইকেল চালক শহীদুল ইসলাম(২৫), মোঃ মাহবুব আলম(২২) ও বেলাল হোসেন(২৪)-কে আটক করে পুলিশে দেয়।