মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলার উদ্দেশ্য কি?
।। পারদর্শী।।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক মিঠুন চাকমাকে আটকের পর তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে নতুন একটি মামলা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় তাঁকে তিন দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বর্তমানে তিনি পুলিশী রিমাণ্ডে রয়েছেন। তাঁকে যেসব মামলায় ওয়ারেন্ট দেখিয়ে আটক করা হয়েছে সেসব মামলায় রিমাণ্ড চাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। কারণ ওইসব মামলায় ইতিমধ্যে অনেকেই জেল খেটেছেন এবং কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয়েছেন। ফলে মিঠুন চাকমাকে নির্যাতন করার জন্য দরকার হয়ে পড়েছিল নতুন মামলার। অন্য কোন আইনে মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ গঠন আর সম্ভব নয় সেহেতু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনকেই বেছে নেয়া হলো। তার বিরুদ্ধে যথারীতি অভিযোগ গঠন করে উক্ত আইনের ৫৭(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হলো। মিঠুনের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠরুদ্ধ করার আরেকটি নতুন অস্ত্র প্রয়োগ করা হলো।
দীর্ঘ যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের উপর চলে আসছে নানা কিসিমের নির্যাতন। সেনাশাসন বলবৎ রেখেই মূলত এই নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে। অতীতে নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হলেও বর্হিবিশ্বে তেমন খবরা-খবর প্রচার করার সুযোগ ছিল না। কারণ এদেশের মিডিয়াগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়ন-নির্যাতনের খবরগুলো স্থান পায় না বললেই চলে। উল্টো পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিয়োজিত ছিল তাদেরকে সন্ত্রাসী-বিচ্ছিন্নতাবাদী ইত্যাদি আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মুহুর্তের মধ্যেই অন্যায়-অবিচারের খবরাখবর ছড়িয়ে দেয়া যায়। বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অভিমত তুলে ধরা যায়। এই পথটিও রুদ্ধ করে দিতেই এখন এই আইনের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে।
যতদূর জানি, মিঠুন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের উপর অন্যায়-অত্যাচারসহ ব্যক্তিগত নানা মতামত বিভিন্ন ব্লগের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। যেহেতু এদেশের প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও বর্তমানে অনলাইন মিডিয়াগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতনের খবরগুলো স্থান পায় না, সেহেতু ব্লগে লেখার মাধ্যমেই এসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং নিজস্ব মতামত তুলে ধরা কোন অন্যায় হতে পারে না। মিঠুন চাকমা সরকার উচ্ছেদের আহ্বান জানিয়ে কোন লেখা তার ব্লগ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেননি। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়-অবিচারগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মাত্র। সরকারের উচিত ছিল মিঠুনের মতামত বা বক্তব্যগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা। কিন্তু তা না করে সরকার উল্টো মিঠুনকে গ্রেফতার করেছে এবং তাঁকে হয়রানি করার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়েছে। এই নতুন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ন্যায্য ও যৌক্তিক বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের যে ধারা প্রয়োগ করে মামলা দেওয়া হয়েছে সে ধারায় উল্লেখিত কোন অপরাধই তিনি করেননি। মূলত রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অংশ হিসেবেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিঠুনের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে, যাতে করে পরবর্তীতে আর কেউ সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না পায়।
সকলের মনে রাখা দরকার যে, সরকার একদিকে নানাভাবে জুম্মদের প্রতিবাদী কণ্ঠরুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, অপরদিকে উন্নয়ন ও চুক্তি বাস্তবায়নের নানা কথা বলে জুম্মজনগণকে ভুলিয়ে রেখে জুম্ম ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। কাজেই, সরকারের এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার আর কোন সুযোগ নেই।#
——————
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
———————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।