পিসিপি’র ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চবি ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার অনলাইন আলোচনা

মুক্তিকামী মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া

0

নিজস্ব প্রতিবেদক।। পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়ন চলছে। মুক্তিকামী মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব বিশ্বের যে কোন প্রান্তে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত অনলাইন আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার (১৮ মে ২০২১) বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য রোনাল চাকমার সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি গৌরচাঁদ ঠাকুর অপু,গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল’র কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাজেশ্বর দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী আরমান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মহানগর শাখার সভাপতি দীপা মজুমদার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মিটন চাকমা।

আলোচনায় অমল ত্রিপুরা বলেন, পিসিপি গঠন হওয়ার আগে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অনেক ছাত্র সংগঠন গড়ে উঠলেও সেসময় তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ১৯৮৯ সালে ৪ঠা মে লংগদুর গণহত্যার মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠনের পরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাড়া জাগায়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠনের পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন প্রতিবাদের মাধ্যমে পাহাড়ে ঘটে যাওয়া গণহত্যা, ধর্ষণ, ভূমি বেদখল ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা সারা দেশের মানুষ জানতে পারে।

তিনি আরও বলেন নব্বই দশকের মত শাসকশ্রেণী বর্তমান সময়েও মুখোশ বাহিনী গঠন করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীদেরকে গুম, হত্যা, অপহরণ করে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন থেকে ছড়িয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। শাসকশ্রেণী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গৌরবময় ইতিহাসকে কলুষিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নাম ভাঙিয়ে নতুন নতুন সংগঠন করে দিচ্ছে।

গৌরচাঁদ ঠাকুর অপু বলেন, মুক্তিকামী মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব বিশ্বের যে কোন প্রান্তে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

তিনি আরও বলেন বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধান না করে ইচ্ছাকৃতভাবে সমতলের নিরীহ অসহায় মানুষদের পার্বত্য চট্টগ্রামে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে শাসন শোষন চালিয়ে যাচ্ছে।

দীপা মজুমদার বলেন, পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়ন চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণ শাসকশ্রেণী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন, শোষণ, বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতাহীন দেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমান পাহাড়িদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে বাঙালি হওয়ার নির্দেশ দেন।

রাজেশ্বর দাশ গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যেই সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে সমাধান না করে উল্টো সেনা মোতায়েন বৃদ্ধি করে সেনাশাসন জারি রেখেছে। পার্বত্য চুক্তির শর্ত অনুয়ায়ী সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করার কথা থাকলে ও সরকার তা করেনি।

তিনি আরও বলেন বর্তমানে সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ভূমি বেদখল করে পর্যটন ব্যবসা শুরু করেছে।

কাজী আরমান বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসত্তাদের অস্বীকার করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।

অমিত চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের অনেক নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের ফলে আজ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ৩২ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের এই লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে তপন, এল্টন, রমেল চাকমার মত অনেক নেতা কর্মী শাসক শেণীর হাতে শহীদ হন।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালীনও শাসকশ্রেণী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ জনগণের উপর দমন-পীড়ন জারি রেখেছে।

মিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন এই করোনার সময়েও শাসকশ্রেণী সেটলার বাঙালি দিয়ে মাটিরাঙায় ভূমি বেদখল করার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছিল।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More