প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের বিবৃতি
ম্রোদের উচ্ছেদ করে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে
ঢাকা ।। দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ এক বিবৃতিতে বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের উচ্ছেদ করে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিটি গত ২৮ নভেম্বর ২০২০ সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া হয়।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমুহের পক্ষ থেকে ম্রোদের ভূমি রক্ষার্থে আগামী ৫ ডিসেম্বর ২০২০, শনিবার শাহবাগ, ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্রসংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের বিবৃতিতে বলা হয়, বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড় থেকে ম্রোদের উচ্ছেদ করে সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আর এন্ড আর হোল্ডিংস ও সেনা কল্যাণ ট্রাষ্টের যৌথ অর্থায়নে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নিমার্ণ বন্ধ করে তাদের আবাসভূমিতে স্ব স্ব জীবন ব্যবস্থা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারের দাবি জানিয়ে গত ৭ অক্টোবর ২০২০ বান্দরবান জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে ম্রো জনগোষ্ঠী। এর ধারাবাহিকতায় গেল ৮ নভেম্বর তারা বান্দরবান—চিম্বুক—থানচি সড়কের কাপ্রম্নপাড়া এলাকায় কালচারাল শোডাউন ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে।
পরবর্তীতে আমরা লক্ষ্য করছি, ম্রো জনগোষ্ঠীর এই যৌক্তির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী সরকারি মিটিং ও চাল বিতরণের কথা বলে আলীকদম উপজেলা ও আশেপাশের এলাকা থেকে সহজ—সরল পাহাড়িদের ডেকে এনে বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে ‘সেনাবাহিনী সম্পর্কে অপপ্রচার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রুখে দেই’, ‘সেনাবাহিনী—ম্রো এক হয়ে সন্ত্রাসবাদ রুখে দেই’, নিজেদের জীবিকা নিজে করি প্রশ্ন কেন উচ্ছেদের’— ইত্যাদি স্লোগানে সজ্জিত প্ল্যাকার্ডে মানববন্ধন করতে বাধ্য করে, যা ১৭ নভেম্বর ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং ম্রোদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে দেশের প্রগতিশীল ব্যক্তি, সংগঠন ও নাগরিকবৃন্দের ধারাবাহিক প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে গত ২২ নভেম্বর বান্দরবান জেলা পরিষদ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা নাইতং পাহাড়ে বর্তমানে ম্রো জনগোষ্ঠী নেই, পূর্বেও ছিল না উল্লেখ করে বলেন, “সম্প্রতি যে জমিতে পর্যটন হোটেল নির্মাণের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পক্ষ যে বাদ প্রতিবাদ জানিয়ে চলছে, তর্কিত জমিটি (নাইতং পাহাড়) লামা উপজেলাধীন ৩০২ নং লুলাইন মৌজায় অবস্থিত। উক্ত জমিতে পরিষদের তত্ত্বাবধানে কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেখানকার স্থানীয় জনগণের কৃষিভিত্তিক জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ—আলোচনার মাধ্যমে ২০ (বিশ) একর ৩য় শ্রেণীর ভূমি পরিষদের নামে বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।”
এতে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন করতে হয় যে, নাইতং পাহাড়ে ম্রোদের জনবসতি না থাকলে, ২০১১ সালে ২০ একর ভূমি পরিষদের নামে বন্দোবস্তনেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ম্রো নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ—আলোচনার প্রয়োজন পড়ল কেন ? এছাড়া যে জমিটি পরিষদের নামে এখনও বন্দোবস্ত (প্রক্রিয়াধীন) হয়নি, কোন অধিকারে সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি করে উক্ত জমি ৪০ বছরের জন্য লীজ দেওয়া হল?
বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় সূত্রে আমরা আরও নিশ্চিত হয়েছি যে, ম্রোদের মধ্যে যারা ভূমি রক্ষার আন্দোলনের সাথে যুক্ত তাদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে, স্থানীয়দের দৈনন্দিন কাজে বাধা প্রদান করা হচ্ছে এবং প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সীমানা পিলার স্থাপন করে তার অভ্যন্তরে স্থানীয়দের প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে।
এতে আরো বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের নামে সেনাবাহিনী পাহাড়ি জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করার জন্য বহুমূখী প্রকল্পের মধ্যে ট্যুরিজমকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রামে ট্যুরিজম উন্নয়নের মাধ্যমে তারা পাহাড়িদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে এবং একই সাথে তার প্রতিবাদ করলে পাহাড়িদের উন্নয়ন বিরোধী অ্যাখ্যা দিয়ে সমতলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ উন্নয়নের নামে ম্রোদের উচ্ছেদ করে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নিমার্ণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে উক্ত বানিজ্যিক প্রকল্প বন্ধ পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যা যথাযথভাবে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানে পর্যটন করার অন্যতম শর্ত হিসেবে স্থানীয় জনগণের স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে ম্রোদের ভূমি রক্ষার্থে এর আগেও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে, সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আগামী শনিবার (৫ ডিসেম্বর) শাহবাগ, ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্রসংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সকলের নিকট আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের পক্ষে বিবতিদাতারা হলেন- বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন—এর সভাপতি আতিফ অনিক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন-এর সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহারিয়ার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য সচিব সায়েদুল হক নিশান, মাহ্লে স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক ডুমরী, সান্তাল ছাত্র ঐক্যের সভাপতি সুশীল কিস্কু, ওঁরাও ছাত্র সংগঠন-এর যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ স্বপন খালকো।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।