ম্রো জনগোষ্ঠীকে জমি থেকে উচ্ছেদের তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাসদ (মার্কসবাদী)

0

ঢাকা ।। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে সিকদার গ্রুপ (আর এন্ড আর হোল্ডিংস ) ও সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট-এর যৌথ উদ্যোগে পাঁচতারা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে সে এলাকায় বংশপরম্পরায় বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠীকে বসতবাটি ও জুমচাষের জমি থেকে উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে প্রকল্পটি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর ২০২০) বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে তথাকথিত উন্নয়নের নামে মুষ্টিমেয় দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের স্বার্থে পাহাড়-সমতল সর্বত্র প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে, আবাদী জমি থেকে চাষীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, নদী-খাল-বিল-বন-পাহাড় উজাড় করা হচ্ছে। উন্নয়নের নাম করেই চিম্বুক পাহাড়ে ও হোটেল পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, অথচ সেখানে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণের তোয়াক্কাই করা হলো না। ইতোমধ্যে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকা ধ্বংসের আশঙ্কায় প্রতিবাদ-আন্দোলন করছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, চিম্বুক পাহাড় এলাকায় উক্ত হোটেল ও পর্যটন স্পট নির্মাণের নামে প্রায় ৮০০-১০০০ একর জমি বেদখল করা হচ্ছে, যার ফলে প্রত্যক্ষভাবে ম্রো-দের চারটি পাড়া ও পরোক্ষভাবে ৭০-১১৬টি পাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রায় ১০ হাজার জুমচাষী উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। জুম ভূমি ছাড়াও সেখানে ম্রো-দের বসতভিটা ও শ্মশান আছে। যে উন্নয়নে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী মুনাফার পাহাড় গড়বে, কিন্তু বিপুল জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে কেমন উন্নয়ন? পরিহাস হলো – যে এলাকায় ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণ করতে চাওয়া হচ্ছে, সেখানে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় নেই।”

তিনি আরো বলেন, “এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা ‘চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট এ্যাক্ট’ অনুযায়ী একটি বিশেষ অঞ্চল। এখানে যেকোন ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড গ্রহণের পূর্বে বিবেচনায় রাখতে হবে – এ এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ী বিভিন্ন জাতিসত্তার সংস্কৃতি-কৃষ্টি-জীবন-জীবিকা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অথচ চিম্বুক পাহাড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে পাঁচতারা হোটেল ও পর্যটন স্পট হলে বংশপরম্পরায় বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আমলে না নিয়ে উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে পাহাড় কেটে হোটেল-মোটেল নির্মাণ, পর্যটনের জন্য প্রাকৃতিক ঝর্ণা, ছড়ায় বাঁধ নির্মাণ ও গতিপথ পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বনের পরিবর্তে বাণিজ্যিক বনায়ন ইত্যাদির ফলাফল হচ্ছে অতিবৃষ্টিতে মারাত্মক পাহাড় ধস। ২০১৫ সালে রাঙামাটিতে সংঘটিত ভয়াবহ পাহাড়ধসের প্রেক্ষিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিও পর্যটনের নামে পাহাড় ধ্বংস বন্ধের সুপারিশ করেছিল। চিম্বুক পাহাড়ে পূর্বের একটি পর্যটন স্পট থাকার পরও বিশেষজ্ঞদের সমস্ত সুপারিশ উপেক্ষা করে এবং বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলে এ তৎপরতা চরম গণবিরোধী।”

কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারা হোটেল ও পর্যটন স্পট নির্মাণের বিরূদ্ধে স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর আন্দোলনে পূর্ণ সংহতি জানান এবং অবিলম্বে জীবন-জীবিকা ও পরিবেশ ধ্বংসকারী এ ব্যবসায়িক প্রকল্প বন্ধে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More