রমেল চাকমা হত্যায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

0

রাঙামাটি : রাঙামাটির নান্যাচর কলেজের ছাত্র (এইচএসসি পরীক্ষার্থী) ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমাকে নির্যাতন ও হত্যায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (০৮ আগস্ট) রাঙামাটির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জয়ন্ত চাকমা বাদী হয়ে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ আইন নং ২০১৩) এর ১৫/২ ধারায় নিন্মোক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। যার পিটিশন মামলা নং-১২২/২০১৭।

মামলায় অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা হলেন- নান্যাচর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল বাহালুল আলম, মেজর তানভীর, ক্যাপ্টেন মোশাতফ হোসেন ও ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ সাদেন হোসেন।

সেনা নির্যাতনে নিহত রমেল চাকমা। # ফাইল ছবি
সেনা নির্যাতনে নিহত রমেল চাকমা। # ফাইল ছবি

রাঙামাটির বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দায়েরকৃত উক্ত মামলা আমলে নিয়ে অভিযুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগামী যেকোনো দিন আদেশ প্রদান করতে পারেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে সেনা নির্যাতনে রমেল চাকমার মৃত্যুর দীর্ঘ ৪ মাস পরে নির্যাতন ও হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদেদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে মামলা আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিতে গড়িমসি করায় নেতৃবৃন্দ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে মামলা আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ প্রদানের জন্য বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি আহ্বান জানান।

এই মামলা আমলে নেয়া হলে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলা অন্যায় অবিচারের কিছুটা হলেও আইনানুগ নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে বলে নেতৃবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল ২০১৭, সকাল ১০টার দিকে নান্যাচর সেনা জোনের কমাণ্ডার বাহালুল আলমের নির্দেশে মেজর তানভীরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টিম রমেল চাকমাকে বাজার থেকে ফেরার পথে নান্যাচর উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে আটক করে এবং সেনাজোনে নিয়ে দিনভর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় নান্যাচর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তাকে গ্রহণ না করায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ৬ এপ্রিল, ২০১৭ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১৯ এপ্রিল রমেল চাকমার মৃত্যু হয়। ২০ এপ্রিল তার মরদেহ চট্টগ্রাম থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে আনা হলে সেদিন রাতে বুড়িঘাট থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার লাশ ছিনিয়ে নেয় এবং ২১ এপ্রিল পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের অনুপস্থিতিতে কোন প্রকার ধর্মীয় বিধান ছাড়াই পেট্রোল ঢেলে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলে।

সেনা হেফাজতে রমেল চাকমার মৃত্যুর পরে দেশে বিদেশে এই হত্যার প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা, সমালোচনা, আন্দোলন, প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। রমেল চাকমার পিতা ছেলের হত্যার বিচার চেয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বরাবরে আবেদন করলে কমিশন এই মৃত্যুর তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করে। কিন্তু তীব্র আন্দোলনের পরেও হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ধরণের প্রকাশ্য আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More