রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর পরিকল্পিত হামলা
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি শহরে আজ ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার পাহাড়িদের ওপর এক পরিকল্পিত হামলায় নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান, কলেজের শিক্ষক ও এক সাংবদিকসহ শতাধিক পাহাড়ি আহত হয়েছেন। এছাড়া হামলাকারী বাঙালিরা বনরূপায় পাহাড়িদের বেশ কয়েকটি দোকান পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালায় এবং একটি বাস ও ৫টি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব চাকমা এক বিবৃতিতে উক্ত হামলাকে পূর্ব পরিকল্পিত আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করেছেন। তিনি হামলার সময় পুলিশের নিরব ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, পুলিশ দাঙ্গাকারীদের বাধা দেয়ার কোন চেষ্টা করেনি; প্রশাসনের পক্ষ থেকে সময় মতো পদক্ষেপ নেয়া হলে এই ভয়াবহ হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হতো।
ঘটনার সূত্রপাত:
সকাল সাড়ে দশটার দিকে রাঙামাটি সরকারী ডিগ্রী কলেজে বাংলাদেশ ছাত্র লীগ ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে একটি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। পরে তা দ্রুত পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের রূপ নেয়। এ সময় এক জন সেনা সদস্যসহ উভয় পক্ষের ৪২জন আহত হন।
এরপর হামলা
কলেজের উক্ত সংঘর্ষের জের করে শত শত উচ্ছৃঙ্খল বাঙালি সাড়ে এগারটার দিকে বনরূপা, নিউ মার্কেট, কালিন্দিপুর, কলেজ গেটসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়িদের ওপর হামলা চালায়। তারা পাহাড়িদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও কিনিকে ব্যাপক ভাঙচুর করে। বনরূপায় পাহাড়িদের ৪ – ৫টি মোটর সাইকেল ও কলেজ গেটে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ হামলায় বনরূপার পেট্রোল পাম্প এলাকায় ডা: কনিষ্ক চাকমার মেডিক্যাল চেম্বার, ডা: পরেশ খীসার ক্লিনিক ও সুকুমার দেওয়ানের ওয়ান ব্যাংক তছনছ করে দেয়া হয়।
কলেজ শিক্ষকদের মারধর
বাঙালিরা রাঙামাটি সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যা বাঞ্চিতা খীসার কক্ষে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সেখানে তারা কলেজের শরীর চর্চার শিক্ষক ওয়াইচিং মারমাকে মারধর করে। এছাড়া গণিতে শিক বিমান দত্ত ও উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষক সমীর কান্তি নাথ নামে দুই হিন্দু শিক্ষকের ওপরও চড়াও হয়।
ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্মেলনে হামলা
বাঙালিরা এক পর্যায়ে উপজেলা হল রুমে ঢুকে পড়ে। এ সময় সেখানে তিন পার্বত্য জেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের সম্মেলন চলছিল। হামলাকারীরা পাহাড়ি ইউপি চেয়ারম্যনদের ওপর হামলা চালায়। এতে অনেকে আহত হলেও এখন পর্যন্ত এগার জনের নাম পাওয়া গেছে। এরা হলেন পরিতোষ চাকমা (বাবুছড়া ইউপি), মঙ্গল চাকমা (লংগুদু ইউপি), শম্ভু তঞ্চঙ্গ্যা (রোয়াংছড়ি ইউপি), সানুপ্রু মারমা (সুয়ালক ইউপি), থোয়াইরিং মারমা (চিৎমরম ইউপি), চাইলাপ্রু মারমা (কোয়াংলাং ইউপি), উচিপ্রু মারমা (হাফছড়ি ইউপি), চন্দ্র রঞ্জন চাকমা (দীঘিনালা ইউপি), বিশ্ব কল্যাণ চাকমা (কবাখালি ইউপি) ও চুইনু প্রু মারমা (সিন্দুকছড়ি ইউপি), অসেতু বিকাশ চাকমা(পানছড়ি)।
১৪৪ ধারা জারি
হামলা প্রায় শেষ হয়ে আসার পর আনুমানিক দুপুর একটার দিকে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু তার আগে সকাল সাড়ে দশটা থেকে আড়াই ঘন্টা পর্যন্ত হামলাকারীরা তাণ্ডব চালায়। পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়ার কোন চেষ্টা করেনি, বরং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে তাদেরকে ধ্বংসাত্মক কাজে উৎসাহ দেয়।
আহত আরো কয়েকজন:
এ হামলায় কত জন আহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন, তাপস চাকমা (মাথায় আঘাত), ডা. সুশোভন চাকমা (হাত পা ভেঙে দেয়া হয়েছে, মাথায় আঘাত), শিমুল চাকমা (মাথায় আঘাত), ধীমান খীসা (হাতে আঘাত), শাক্যমনি চাকমা পীং পুনং চান চাকমা (রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন), দয়াময় চাকমা (পীং জয়দ্বীপ চাকমা, কলেজ ছাত্র, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন), শুভংকর চাকমা পীং শশাংক চাকমা, সুব্রত চাকমা পীং ঠাকুর প্রসাদ চাকমা, আশীষ চাকমা পীং নিয়তি চাকমা, জবা চাকমা (কলেজ ছাত্রী, ১ম বর্ষ), আনন্দ সাগর চাকমা (মাছ ব্যবসায়ী, নান্যাচর), অহি চাকমা (মিদিঙাছড়ি), জ্ঞান চাকমা (সুভলং), শিমূল কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা (বিলাইছড়ি, কলেজ ছাত্র), বিজয় চাকমা (ব্যবসায়ী), শুভ চাকমা (বসন্ত এলাকা থেকে) এবং সাংবাদিক হিমেল চাকমা (সকালের খবর, মাথায় আঘাত, আর্মি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন)।
আহতদের মধ্যে সুশোভন চাকমার অবস্থা গুরুতর। তাকে প্রথমে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা চট্টগ্রামে রেফার করেন। তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটিও হামলাকারীরা পুড়ে দেয়।