রাঙামাটির কাউখালীতে গ্রামে গ্রামে সেনা তল্লাশি, ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ!

0

কাউখালী (রাঙামাটি) : গতকাল রবিবার (২০ আগস্ট ২০১৭) রাত ২টা থেকে ভোর ৪:৩০টার মধ্যে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় ঘাগড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে গ্রামে গ্রামে তল্লাশি চালিয়েছে সেনাবাহিনী। রাঙামাটি ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার থেকে আগত কর্ণেল রেদওয়ান, মেজর রায়হান ও স্থানীয় কাউখালী ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার শফিকের নেতৃত্বে ৭০ জনের অধিক সেনা সদস্য ২/৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে এ তল্লাশি অভিযান চালায়। তাদের দলে সেনা পোশাক পরিহিত মুখে গামছা বাঁধা জনৈক স্পাইকেও এলাকাবাসী দেখেছেন বলে জানা গেছে।

Searchঅত্র ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ায় অবস্থিত পানছড়ি আর্মি ক্যাম্পটি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসাবে এ তল্লাশি অভিযান বলে এলাকাবাসী ধারণা করছেন।

রাঙ্গী পাড়া, ডানে উল্টা পাড়া, বামে উল্টা পাড়া ও তালুকদার পাড়াসহ সবমিলিয়ে ৪টা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। অভিযান পরিচালনার সময় যাদের বাড়ি তল্লাশি চালানো হয় তারা হলেন- রাঙ্গী পাড়া গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের  ১.তুষার কান্তি চাকমা (৪৭),  পিতা- ¯েœহ কুমার চাকমা; ২. প্রশান্ত চাকমা (৫২), পিতা- চন্দ্র মোহন চাকমা।

উল্টা পাড়া গ্রামের  ১. যুব লাল চাকমা (৪৫), পিতা- স্নেহ কমল চাকমা; ২. স্নেহ কমল চাকমা (৬৫), পিতা- মৃত বাদী চন্দ্র চাকমা; ৩. মুনিন্দ্র তালুকদার (৫৮), পিতা- পুলিন বিহারী তালুকদার

তালুকদার পাড়া গ্রামের ১. সুমন তালুকদার (৩৭), পিতা- রাম কৃষ্ণ তালুকদার; ২. জগদীশ দেওয়ান (৪০), পিতা- মৃত বন বিহারী কার্বারী; ৩. অমৃত লাল দেওয়ান (৪৫), পিতা- অনিল দেওয়ান; ৪. সুগত চাকমা (৪৫), পিতা- নলীন্দ চাকমা। এর মধ্যে তুষার কান্তি চাকমা ও যুব লাল চাকমা ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান ও সাবেক মেম্বার।

তুষার কান্তি চাকমা (মেম্বার) এই প্রতিবেদককে বলেন, তাকে সেনা সদস্যরা ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে এবং তার পরিবারের সদস্য কতজন এবং কে কোথায় থাকে প্রশ্ন করতে থাকে। বাইর থেকে লোকজন এখানে এসে অবস্থান করে কিনা জানতে চায়। কে কোন রুমে ঘুমায় তাও জিজ্ঞেস করে। এ সময় তিনি তার ভোটার আ্ইডি কার্ড দেখাতে বাধ্য হন।

প্রাক্তন মেম্বার যুব লাল চাকমা জানান, তার বাড়ি তল্লাশির সময় সেনারা তা ভিডিও করেন এবং কোন আগন্তুক বাড়িতে আছে কিনা জানতে চান।

নিরীহ কৃষক প্রশান্ত চাকমা বলেন, ভোর ৪টার দিকে প্রাকৃতিক ডাকে (প্রস্রাব) সাড়া দেবার উদ্দেশ্যে দরজা খুললে সেনারা বন্দুক উচিয়ে সাথে সাথে তার বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি ভীত হয়ে পড়েন। তাকে পিঠে থাপ্পর দিয়ে তুষার মেম্বারের বাড়ি দেখিয়ে দিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শার্ট পরিধানেরও সুযোগ পাননি। বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, ঘরের যাবতীয় জিনিযপত্র তল্লাশির নামে তছনছ করা হয়েছে।

অমৃত লাল দেওয়ানের স্ত্রী বাসনা চাকমা জানান, সেনা সদস্যরা রাত ২টা দিকে দরজায় নক করে পরিবারের সবাইকে বের হতে বলে। এ সময় তিনি এক বছরের শিশু কণ্যাকে নিয়ে বের হয়ে আছেন। তার মেয়েটি ভীত ও ভয়ে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। তিনি নিজেও আতংকগ্রস্ত হন বলে জানান। অমৃত লাল দেওয়ানকে সেনারা “সঠিক তথ্য” দিয়ে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখায় এবং তার ছবি তুলে নিয়ে যায়।

কর্মসূত্রে জগদীশ দেওয়ান ঢাকায় অবস্থার করেন। সেনারা বাড়িতে টানানো তার ছবি ক্যামেরা বন্দী করেন বলে জগদীশ চাকমার স্ত্রী সুপ্রিয়া চাকমা অভিযোগ করেন।

তালুকদার পাড়ায় অভিযান শেষে সেনারা সুগত চাকমার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা বিমলা চাকমা, জগদীশ চাকমার স্ত্রী সুপ্রিয়া চাকমা ও অমৃত লাল দেওয়ানের কাছ থেকে তাদের বাড়ি তল্লাশির ঘটনায় কোন প্রকার অন্যায় বা ক্ষয়ক্ষতি করা হয়নি বলে মুচলেকা আদায় করে নেয়। ডানে উল্টা পাড়ার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মুরুব্বী মুনিন্দ্র তালুকদারের কাছ থেকেও একইভাবে মুচলেকা আদায় করা হয়।

বাড়ি বাড়ি তল্লশির সময় সেনারা প্রতিটি ঘরের আলমারি, শোকেস, ট্রাঙ্ক, খাট পালং, লেপ-তোষক, বলিশ,ব্যাগ, কাপড়-চোপড়, ‘চোল থং’ (চাল রাখার পাত্র) সহ যাবতীয় জিনিস পত্র তন্ন তন্ন করে ওলট-পালট করে দেয়। তবে অভিযান চলাকালে তারা অবৈধ কোন জিনিস খুঁজে পায়নি। কাউকে আটকও করেনি।

উল্লেখ্য, ঘাগড়া ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ায় অবস্থিত আর্মি ক্যাম্পটি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির ৫/৬ বৎসর পর প্রত্যাহার করা হয়। তার পরিবর্তে সেখানে আনসার ব্যাটালিয়নরে সদস্যরা অবস্থান করতেন। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর সদস্যরা সে ক্যাম্পটির সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেছেন।

ক্যাম্পটির ভূমির মালিক প্রীতি কুমার তালুকদার, পিতা- মৃত লগ্ন কুমার তালুকদার জানান, জোরপূর্বকভাবে সেনাবাহিনী তাদের জায়গায় ক্যাম্পটি স্থাপন করেছেন। নতুন করে সেনা সদস্যরা ফিরে আসার খবরে তিনি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে নতুন করে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুরুব্বীসহ নিরিহ জনগণের উপর রাত বিরাতে সেনা তল্লাশির ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More