রাঙামাটির কুদুকছড়িতে তিন পাহাড়ি এমপি’র কুশপুত্তলিকা দাহ

0
রাঙামাটি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
কুদুকছড়িতে তিন এমপি’র কুশপুত্তলিকা দাহ করছে পাহাড়ি জনতা
কুদুকছড়ি : রাঙামাটির কুদুকছড়িতে পার্বত্য তিন এমপি দীপঙ্কর তালুকদার, বীর বাহাদুর ও যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, রাঙামাটিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার নামে অবৈধ ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া বন্ধ ও রামগড়ে ম্রাইহ্লাপ্রু কার্বারী পাড়া থেকে ৫০ পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে আজ ২৯ জুন শনিবার গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
আজ শনিবার দুপুর ১২ টায় রাঙামাটি জেলার কুদুকছড়িতে ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সুপ্রীম চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিলাস চাকমা ও রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুলু চাকমা প্রমুখ।
 
বক্তারা পার্বত্য তিন এমপিকে জাতীয় কুলাঙ্গার আখ্যায়িত করে বলেন, যেদিন জাতীয় সংসদে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করা হচ্ছিল সেদিন তারা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে টেবিল চাপড়িয়ে নির্লজ্জভাবে বাঙালী জাতীয়তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। বাঙালি জাতিয়তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা পাহাড়ি জনগণের সাথে বেঈমানী করেছেন। পাহাড়ি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েও তারা সরকারী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।বক্তারা আরো বলেন, সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাশের মাধ্যমে বাঙালী ভিন্ন অন্য জাতিসমূহকে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া দিয়েছে। উগ্রজাতীয়তাবাদী এ সংবিধানকে কেবল পাহাড়িরা নয়, সমতলে বসবাসরত সংখ্যলঘু জাতিসমূহও মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না।

রাঙামাটি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, ৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধ দেয়া হলে হাজার হাজার পাহাড়ি পরিবারকে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। যারা লেকের পাশ্ববর্তী পাহাড় টিলায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে তাদেরকেও বনায়নের নামে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বনায়নের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হলে পাহাড়ি জনগণকে সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম তার দাতভাঙ্গা জবাব দেবে এবং প্রতিহত করা হবে বলে বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।

বক্তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ম্রাইহ্লা কার্বারী পাড়া থেকে ৫০ পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাঁদের জায়গায় বাঙালি পূর্ণবাসনের চক্রান্ত করা হচ্ছে। মাটিরাঙ্গার গোমতিতে ৪০ পরিবার পাহাড়ি এখনো গ্রামছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে চাক জাতিসত্তার জনগণ নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন।

বক্তারা সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করে অবিলম্বে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভূমি বেদখল বন্ধ করে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতির দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিলে ভোট দিয়ে পাহাড়ি জনগণের সাথে বেঈমানী করায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত তিন সংসদ দীপঙ্কর তালুকদার, বীর বাহাদুর ও যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

সমাবেশের আগে কুদুকছড়ি বাজারের রাস্তা মাথা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কুদুকছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ করে।

একই দাবিতে নান্যাচরেও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল পৌনে ১০টায় উপজেলা মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার উপজেলা মাঠে এসে এক সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর থানা শাখার সভাপতি অনিল চাকমা ও নান্যাচর কলেজ কমিটির সভাপতি রিপন আলো চাকমা। জনি তালুকদার সমাবেশ পরিচালনা করেন।

তারা অবিলম্বে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া বন্ধের জোর দাবি জানান।

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More