রাঙামাটির সুবলঙে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র হামলায় ৪ ইউপিডিএফ সদস্য নিহত
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
আজ ২১ মে শনিবার সকাল সাড়ে ন‘টার দিকে জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের মিদিঙাছড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর কেন্দ্রীয় সদস্য অনিমেষ চাকমাসহ ৪ জনকে খুন করেছে। নিহত অপর তিন ইউপিডিএফ সদস্যরা হলেন পূর্ণ ভূষণ চাকমা(৪৫), শুক্রসেন চাকমা (৩৫) ও পুলক চাকমা (৩২)।
সকালে সন্তু গ্রুপের একদল সন্ত্রাসী অরুণ চাকমার বাড়িতে এসে ওই হামলা চালায়। এ সময় তারা সেখানে সকালের নাস্তা সেরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ৬ জুনের জাতিসত্তা বিষয়ক কনভেশনসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করছিলেন৷ সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করলে ঘটনাস্থলে অনিমেষ চাকমা ও শুক্রসেন চাকমা(প্রবীন) নামে এক ইউপিডিএফ সদস্য নিহত হন। দু‘জন পানিতে ঝাঁপ দেন। ধারণা করা হচ্ছে তারা আহত অবস্থায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
যে বাড়িতে হামলা হয়েছে তার তিন দিকেই কাপ্তাই লেকের পানি। আক্রান্ত হওয়ার পর ইউপিডিএফ সদস্যরা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি তাদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি চালায়।
সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় অরুণ চাকমার বাড়িও পুড়িয়ে দেয়। এতে গুলিতে নিহত অনিমেষ চাকমার মরদেহ পুড়ে যায়।
অনিমেষ চাকমা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাথে জড়িয়ে পড়েন৷ স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং পার্টিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। আগামী ৬ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক কনভেনশন সফল করতে সমপ্রতি তিনি শ্রীমঙ্গল ও সিলেট সফর করেন।
ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা উক্ত হামলাকে “গণহত্যা” আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান৷ তিনি অবিলম্বে খুনী সন্তু লারমাসহ তার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির মূলে রয়েছেন সন্তু লারমা৷ তার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একের পর এক খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে, অথচ সরকার তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং সরকার সন্তু লারমাকে জামাই আদর দিয়ে আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে বহাল তবিয়তে রেখেছে ও সন্ত্রাসীদের বিভিন্নভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
সচিব চাকমা আরো বলেন, সন্তু লারমা বিগত জরুরী অবস্থার সময় ও গত দুই বছরে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেছে; এখন সে সব অস্ত্র দিয়ে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় অবিরাম সন্ত্রাস চালাচ্ছে এবং ইউপিডিএফ ও রূপায়ন দেওয়ানের নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সদস্যদের নির্বিচারে খুন করছে। তিনি অবিলম্বে সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণেরও দাবি জানান।
প্রতিবাদ:
কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমাসহ ৪ ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে আজ ঢাকা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির কুদুকছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সব সমাবেশে খুনীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
সড়ক ও নৌপথ অবরোধ:
অনিমেষ চাকমাসহ ৪ ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদ, খুনী সন্তু গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচার এবং সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণের দাবিতে আগামী ২৩ মে, সোমবার, রাঙামাটি জেলাব্যাপী শান্তিপূর্ণ পূর্ণ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিস, জরুরী বিদ্যুত্, এ্যাম্বুলেন্স ও সাংবাদিকদের বহনকারী যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে। অবরোধ সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।