রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে ঝগড়াবিল এলাকাবাসীর মানববন্ধন
সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি: কাপ্তাই বাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত প্রজাদের পুনরায় উচ্ছেদ করে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে এবং ভূমিহুকুম দখল মামলা নং-০২(ডি)/২০১৪-১৫(১০৪) বাতিল করার দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এক স্মারকলিপি দিয়েছে ঝগড়াবিল এলাকাবাসী।
রবিবার (২৮ ডিসেম্বর)রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমার সঞ্চালনায় ঝগড়াবিল এলাকাস্থ গৌতম স্মৃতি বৌদ্ধ বিহার কমিটির সভপতি মিলন কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন অসীম চাকমা, বাসুকী কার্বারী প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে আমাদের বাপ-দাদা, চৌদ্দ পুরুষেরা একবার উদ্বাস্তু হয়েছিল। এরপর তৎকালীন সময়ে এদের অনেকে বর্তমান পর্যটন এলাকায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু এ এলাকায় বিজিবি হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফলে আবার সেই মানুষরা বাস্তুচ্যুত হয়ে বর্তমান ঝগড়াবিল এলাকায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে এল.এ. মামলা নং-০২(ডি)/২০১৪-১৫(১০৪) মূলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কর্তৃক অত্র এলাকাবাসীদের নিকট হুকুম দখল নোটিশ জারি করার মধ্য দিয়ে আবার সে ভূমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে’।
তারা সরকারের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ও আমলাতন্ত্রের ষড়যন্ত্রের কারণে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারের এধরনের কাজ ঠিক হচ্ছে না।
মানববন্ধন শেষে ঝগড়াবিল মৌজার হেডম্যান সুরঞ্জন দেওয়ানের নেতৃত্বে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একদল প্রতিনিধি জেলা প্রশাসকের নিকট প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করেন।
২৪৯ জন নারী-পুরুষের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়- “ঝগড়াবিল মৌজার অধিবাসীরা ১৯৬০ দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে বংশ পরম্পরায় বসবাসরত স্ব স্ব জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ১৯৮০ দশকে পর্যটন মটেল নির্মাণের ফলে অনেকে একবার এবং তৎকালীন বিডিআর হেড কোয়ার্টার নির্মাণের ফলে আরেকবার উচ্ছেদ হয়ে পড়ে। এভাবে পর পর কয়েকবার স্থানান্তরের ফলে আমাদের মধ্যে অনেককে যাযাবরের মতো জীবনযাপন করতে হয়েছে। একের পর এক উচ্ছেদ হওয়ার পর বর্তমানে ১৯৮০ সাল থেকে বিগত ৩৫ বছর ধরে আমরা বিলাইছড়ি পাড়া ও মিতিঙ্গাছড়ি পাড়ায় বসবাস করে আসছি। অনেক কায়িক পরিশ্রম করে ও অর্থ ব্যয়ে অত্র এলাকার অনাবাদি পাহাড়ি জমি আবাদ ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলেছি এবং বিভিন্ন বনজ ও ফলজ বাগান সৃজন করেছি। প্রস্তাবিত ঝগড়াবিল মৌজায় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অত্র এলাকার অধিবাসীরা আবারো উচ্ছেদের মুখে পড়বে, যা হবে অত্যন্ত অমানবিক ও হতাশাব্যঞ্জক। এর ফলে আমাদের জীবনে নেমে আসবে চরম অনিশ্চয়তা ও বিপর্যয়। স্ব স্ব জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো তার কোন নিশ্চয়তা নেই।”
স্মারকলিপিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাতিলসহ জমি হুকুম দখল প্রক্রিয়া বাতিল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানানো হয়।
—————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।