রাজস্থলীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৩ গ্রামবাসীকে নির্যাতন ও ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ
রাঙামাটি ।। রাঙামাটির রাজস্থলীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৩ গ্রামবাসীকে শারীরিক নির্যাতনের পর ক্যাম্পে নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল ১৬ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বুতাম পাড়া ও বর্মা পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
নির্যাতনের পর যাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় তারা হলেন- বুতাম পাড়ার বাসিন্দা রবিধন ত্রিপুরা (৪৮), পিতা- মিজরাম ত্রিপুরা; দুনেন্দ্র ত্রিপুরা (৪০), পিতা- পুনরাম ত্রিপুরা; বীরবাদু ত্রিপুরা (২৬), পিতা- ফুদুলা ত্রিপুরা; লক্ষণ ত্রিপুরা (২৮), পিতা -সত্যরাম ত্রিপুরা; রামবাদু ত্রিপুরা (৪৬), পিতা- বিষ্ণুজয় ত্রিপুরা; অভিরাম ত্রিপুরা (৩২), পিতা- নকুল ত্রিপুরা; রনবীর ত্রিপুরা (২৭), পিতা- থাংচুরলা ত্রিপুরা এবং বর্মপাড়ার বাসিন্দা চাইল্যাগ্য ত্রিপুরা কার্বারি (৬৩), বলিরাম ত্রিপুরা (৪৬), থার্মেন ত্রিপুরা (৩৬), চাইপ্রুহা ত্রিপুরা (৪৩) ও যোগ্যমিয়া ত্রিপুরা। আরেক জনের নাম জানা যায়নি।
জানা যায়, ঘটনার দিন বিকাল ৩ টার দিকে ফারুয়া সাবজোন থেকে একদল সেনা সদস্য রাজস্থলী ও বিলাইছড়ির সীমান্ত পাড়া বুতাম পাড়া ও তার পাশ্ববর্তী বর্মা পাড়ায় হানা দেয়। এ সময় সেনা সদস্যরা দুই পাড়ার প্রত্যেক জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় এবং গণহারে মারধর শুরু করে। মারধরের ভয়ে এলাকার বৃদ্ধ-যুব সমাজ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যে যার মতন পালিয়ে যায়। মারধর করতে করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা “বন্দুক কই. বন্দুক কই?” বলে বন্দুকগুলো তাদের কাছে জমা দিতে বলতে থাকে।
সেনারা রামবাদু ত্রিপুরাকে মারধরের সময় তার প্রতিবন্ধী মেয়ে (১৯) বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। এতে মারধর করতে থাকা ক্ষিপ্ত সেনা সদস্যাটি ঐ মেয়েটিকে শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে থাকা বাকি সেনা সদস্যরা তাকে নিবৃত্ত করে।
পরে সেনারা দুই পাড়া থেকে রাজস্থলী থানা ও বলি পাড়া সেনা ক্যাম্প থেকে লাইসেন্স করা ১৩ টি দেশীয় বন্দুক জব্দ করে নিয়ে যায়। তার সাথে ১৩ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, যে বন্দুকগুলো জব্দ করা হয়েছে সেগুলো রাজস্থলী থানা ও বলি পাড়ার ক্যাম্প থেকে লাইসেন্স করা। গ্রামটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় ডাকাত-সন্ত্রাসীদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য গ্রামবাসীরা এসব বন্দুক ব্যবহার করে থাকেন। এর জন্য মাসে কিংবা দুইমাস অন্তর অন্তর বলি পাড়া সেনাক্যাম্প ও রাজস্থলী থানায় জবাবদিহি ও তথ্য দিতে হতো গ্রামবাসীদের।
কিন্তু কী কারণে অতর্কিতভাবে সেনাবাহিনী গ্রামবাসীদের সাথে এমন অমানবিক আচরণ করলো তা কেউ বলতে পারছে না। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
* সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী আজ রবিবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে বিলাইছড়ি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ৭ জনকে ’অস্ত্রসহ’ আটকের তথ্য জানানো হয়েছে।
আর বাকী ৬ জনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।