রামগড়ের শনখোলা পাড়ায় সেটলার হামলার ৩ বছর আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার শনখোলাপাড়া, জালিয়া পাড়া ও মানিকছড়িতে পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলার আজ ৩ বছর পূর্ণ হল। ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে সেটলাররা শনখোলা পাড়া সহ পাহাড়িদের ৬টি গ্রামে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৯৪টি বাড়ি ও একটি বৌদ্ধ বিহার পুড়ে ছাই করে দেয় ও ব্যাপক লুটপাট চালায়।
সেদিন যা ঘটেছিল:
১৭ এপ্রিল ২০১১ সকালে সেটলাররা শনখোলা পাড়ায় পাহাড়িদের জমিতে ঘর তুলতে যায়। তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করে ফেলে। পাহাড়িরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করলে সেটলাররা তাদের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হয়। পাহাড়িরা তাদের প্রতিরোধ করলে তা সংঘর্ষের রূপ নেয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে পরে তিনজন সেটলার মারা যায়।
এ ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেটলাররা দুপুর ১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উত্তর শনখোলা পাড়া সহ ৬টি পাহাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ৯৪টি বাড়ি ও দাইমা সুখা বৌদ্ধ বিহার পুড়ে ছাই করে দেয়।
হামলাকারী সেটলাররা জালিয়া পাড়ায় যাত্রীবাহী বাস আটকিয়ে পাহাড়ি যাত্রীদের ব্যাপক মারধর করে। এ সময় সেখানে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকলেও তারা যাত্রীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি।
সন্ধ্যার দিকে সেটলাররা লাশ নিয়ে মিছিল শেষে মানিকছড়িতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
সেটলারদের হামলায় সেদিন বহু পাহাড়ি আহত হয়। মারাত্মকভাবে আহত হয় ১৩ বছরের শিশু মিপ্রু মারমা, গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জ্যোতি রঞ্জন চাকমা সহ আরো অনেকে। পরে মিপ্রু মারমার রক্তাক্ত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ পায়।
এ হামলায় চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি ফেরার পথে আশীষ চাকমা নিখোঁজ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মিলেনি। সে চট্টগ্রামের শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিল।
এ হামলার ৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও চিহ্নিত হামলারকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন তেমন কোন দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটেই চলেছে।
এদিকে, হামলাকারী সেটলাররা এখনো নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে জায়গা-জমি বেদখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে এলাকার পাহাড়িরা অভিযোগ করেছেন। যার কারণে এখনো নানা আশঙ্কার মধ্যে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও তারা জানান।