রামগড়ে বিজিবি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি বেদখল করে সেটলার পুনর্বাসনের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ, ৪ জুলাই রামগড়সহ তিন উপজেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা
খাগড়াছড়ি জেলাধীন রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ২৩৭ নং নভাঙা মৌজার পিলাভাঙা গ্রামে বিজিবি কর্তৃক পাহাড়িদের জমি বেদখল করে সেটলার পুনর্বাসনের প্রতিবাদে আজ ২ জুলাই সোমবার খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আগামী ৪ জুলাই, বুধবার মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা সহ খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অর্ধ দিবস অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মহাজন পাড়া থেকে বিকাল ৩টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার, উপজেলা পরিষদ হয়ে স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নিকোলাস চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উমেশ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা।
অন্যদিকে, গুইমারা বাজারের কালি মন্দিরের সামনে থেকে বেলা ২টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদণি করে গুইমারা হাসপাতালে গেটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা, মাটিরাঙ্গা কলেজ শাখার সভাপতি অংকন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য নন্দা চাকমা।
এসব সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গত ৬ জুন থেকে বিজিবি (বর্ডার গার্ড, বাংলাদেশ) সদস্যরা অস্ত্রের জোর দেখিয়ে এলাকার জনগণকে ভীত সন্ত্রস্ত করে ও দেশের আইন কানুনের প্রতি কোনরূপ তোয়াক্কা না করে রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ২৩৭ নং নভাঙা মৌজাস্থ পিলাভাঙা গ্রামের বাসিন্দা পুর্ণচন্দ্র চাকমা, পিতা মৃত ময়ূরধ্বজ চাকমার রেকর্ডিয় ও ভোগদখলীয় জমি জোপরপূর্বক দখল করে এবং ৪৫টি সেটলার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ শুরু করেছে। বিজিবি সদস্যরা জালিয়া পাড়া থেকে পিলাভাঙায় ক্যাম্প বসিয়ে সেটলারদের ঘর-বাড়ি নির্মাণ কাজে সহযোগিতা দিচ্ছে। তাদের প্রত্য তত্ত্বাবধানে বেআইনীভাবে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। তারা কোন পাহাড়িকে ওই দিকে যেতে দিচ্ছে না।
বক্তারা অবিলম্বে পিলাভাঙা গ্রামে জমি বেদখল ও সেটলার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে আবারো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
বক্তারা আগামী ৪ জুলাই আহুত অর্ধ দিবস সড়ক অবরোধ সফল করতে যানবাহন মালিক সমিতিসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে পিলাভাঙা গ্রামে ভূমি বেদখল ও সেটলার পুনর্বাসন বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। উক্ত স্মারকলিপিতে তারা অবিলম্বে পিলাভাঙা গ্রামে বেআইনী সেটলার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করা, পূর্ণচন্দ্র চাকমার রেকর্ডিয় ও ভোগদখলীয় জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা ও পিলাভাঙা থেকে বিজিবি ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া এবং সেটলার কর্তৃক বেদখলকৃত সকল জমি পাহাড়িদের প্রথাগত নিয়মানুসারে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন পাতাছড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মানেন্দ্র চাকমা, ২নং হাফছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার বিশু কুমার চাকমা, পুর্ণচন্দ্র কার্বারী, প্রতাপ সিং চাকমা ও মংথৈইগ্য মারমা প্রমুখ।