রামগড়-মানিকছড়িতে সেটলার হামলার বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
গত ১৭ এপ্রিল রামগড় ও মানিকছড়িতে সেটলার কর্তৃক পাহড়িদের বাড়িঘরে হামলা,অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরর করেন থোয়াইঅংগ্য মারমা ও নিলাঅং মারমা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৭ এপ্রিল ২০১১ খ্রি: একদল সেটলার বাঙালী ও সেনাবাহিনী সিন্ধুকছড়ি জোন কমান্ডার মো: কামরুল হাসান-এর সহযোগিতায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় উপজেলাধীন হাফছড়ি ইউনিয়নের উত্তর শনখোলা পাড়া, সলুডং পাড়া, রেম্রং পাড়া, তৈকর্মা পাড়া, পথাছড়া ও মানিকছড়ি উপজেলাধীন মহামুনি ক্যজাই কার্বারী পাড়ার জুম্ম অধিবাসীর উপর সংঘবদ্ধভাবে সামপ্রদায়িক হামলা চালিয়ে সেটলার বাঙালিরা ১টি বৌদ্ধ বিহার সহ মোট ৯৫টি ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগ করে ভষ্মিভূত করে দেয়।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল ২০১১ খি: জালিয়াপাড়া বড় পিলাক থেকে ৩০/৪০ জন সেটলার বাঙালী উত্তর শনখোলা পাড়া মারমাদের পৈতৃক জমি ৩০০.০০ (তিনশত) একর-এর অধিক ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে জঙ্গল কাটতে যায়৷ সে সময় গ্রামবাসীরা রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মংশাপ্রু চৌধুরী, হাফছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটলারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এরপর ১৭ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৯টার সময় সেটলাররা উক্ত ভূমি বেদখল করতে যায়। তারা জঙ্গল পরিষ্কার করে সঙ্গে সঙ্গে কচু, হলুদওকলা গাছ রোপ করতে থাকে। পরে স্থানীয় মারমারা বাধা দিতে গেলে সেটলার বাঙালিরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন মারমা আহত হয়। পরে আরো বিভিন্ন এলাকা থেকে সেটলারও সিন্ধুকছড়ি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী আসতে দেখে পাহাড়িরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বেলা ২টা হতে ২:৩০ টার আনুমানিক সময় সেটলাররা শনখোলা পাড়া, সলুডং পাড়া, পথাছড়া, রেম্রং পাড়া, তৈকর্মা পাড়ায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপট চালিয়ে ৩৮ জন পাহাড়িকে আহত করা হয়।
এরপর একই দিনে বিকাল ৫টার সময় মানিকছড়ি উপজেলা সদরে মহামুনি ক্যজাই কার্বারী পাড়ায় সেটলার বাঙালিরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিগত ১৯৮০‘র দশক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশকারী সেটলার বাঙালিরা ভূমি বেদখল করে বসতি স্থাপন করছে। সেই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে ১৭ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটানো হয়।
অভিযোগপত্রে অবিলম্বে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক ঘটনার স্থান পরিদর্শনসহ ঘটনা তদন্ত করা, দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ পাহাড়িদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, অবিলম্বে ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও বেদখলকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়া; পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি, অনুপ্রবেশকারী সেটলারদের সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন এবং সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হয়।