রুইলুই পাড়ায় উচ্ছেদ আতঙ্ক কাটছে না, আশেপাশের গ্রামে নতুন আতঙ্ক
সিএইচটি নিউজ ডটকম
সাজেক প্রতিনিধি : রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটন কেন্দ্র এলাকায় বসবাসরত পাহাড়িদের উচ্ছেদ আতঙ্ক কাটছে না। সড়কের দুই পাশে বসবাসরত পাহাড়িদের নতুন কোন ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে না পারায় এই আতঙ্ক আরো বেশি দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকা থেকে কমপক্ষে ১০ পরিবার পাহাড়ি (ত্রিপুরা) উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন। আশেপাশে গ্রামে বসবাসরত পাহাড়িদের মধ্যেও নতুন করে উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রুইলুই পাড়ায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার কারণে ১০০ পরিবারের বেশি ত্রিপুরা, পাংখোয়া ও লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষ এই উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজেকের রুইলুই পাড়ায় সফর করেন। পাড়াটি পরিদর্শনের পর রুইলুই পাড়াকে পর্যটন কেন্দ্র করার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে সেনাবাহিনী রুইলুই পাড়ায় পর্যটকদের জন্য রিসোর্ট নির্মাণ শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রুইলুইকে আকর্ষণীয় করতে পার্কসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। রিসোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা ও সড়ক উন্নয়নের নামে কৌশলে পাহাড়িদের ১০০ একরের বেশি জমি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন। ইতিমধ্যে ৩০ একরের বেশি পরিমাণ জমি বেদখল হয়েছে। রুইলুই পাড়া সড়কের দুই পাশে বসবাসরত পাহাড়িরা নতুন করে কোন বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে পারছে না।
স্থানীয়রা জানান, পর্যটন কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও সড়ক উন্নয়নের নামে রুইলুই পাড়ায় আরও ১০০ একর জমি কৌশলে দখলের পাঁয়তারা চলছে। গত এক বছরে কমপক্ষে ১০ পরিবার ত্রিপুরা উচ্ছেদ হয়েছেন। নতুন করে এই জমি বেদখল হয়ে গেলে কংলাক পাড়া ও দাঁড়ি পাড়ার ১০০ পরিবার চাকমা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া ও লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষ উচ্ছেদ হয়ে যাবে।
রুইলুই পাড়া, দাঁড়ি পাড়া ও কংলাক পাড়া প্রধানরা জানান, আগামী কিছু দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর (ইসিবি) সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করবে। এটা হলো রুইলুই পাড়া-ব্যাটলিং পাড়া-বরকল। রুইলুই পাড়া থেকে বরকলের ঠেগামুখ পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার আর রুইলুই পাড়া থেকে ব্যাটলিং পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার। এই সড়ক নির্মাণের জন্য সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ১৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বলে জানা গেছে। সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হলে কংলাক পাড়া, দাঁড়ি পাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় জমি বেদখল হয়ে যাবার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় গ্রামপ্রধান ও জনপ্রতিনিধিরা।
কংলাক পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য তনা পাংখোয়া বলেন, কিছুদিনের মধ্যে ব্যাটলিং ও ঠেগামুখ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। গত মাসে এক সেনা কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‘আমরা অতি দ্রুত কাজ শুরু করবো। কাজ শুরু হলে আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে’। রাস্তা নির্মাণ হলে তাঁর বাগানে ব্যাপক সংখ্যক গাছ কাটা পড়বে বলে তিনি জানান।
দাঁড়ি পাড়া গ্রামের দাঁড়ি কার্বারী ও ছয়নাল ছড়া গ্রামের সাগর কার্বারী বলেন, আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারছি সরকারের আরও ১০০ একর জমি প্রয়োজন। সেই জমি হবে সড়কের দু’পাশে। আমরা ধারণা করছি সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ব্যাপক সাধারণ মানুষ উচ্ছেদ হয়ে যাবে। কারণ দাঁড়িপাড়া ও কংলাক পাড়ার লোকজন রাস্তার দুই পাশেই বসবাস করছেন। ফলে ওই এলাকার লোকজন চরম উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।