রেডিও তেহরানের খবর: চুক্তির ১৬ বছর: পাহাড়ে শান্তি আসেনি; আবারো সহিংসতা, গুলিতে নিহত ১
ডেস্ক রিপোর্ট
সিএইচটিনিউজ.কম
রেডিও তেহরান গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার খবরে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে। এতে বলা হয় পার্বত্য চুক্তির ১৬ বছর পরও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। সংবাদটি তাদের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়েছে।
উক্ত রেডিও সংবাদ প্রতিবেদনে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় জেএসএস এম এন লারমা গ্রুপের নেতা মিঠুন চাকমাকে গুলি করে হত্যা, পানছড়িতে সুপন চাকমা হত্যা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সড়ক ও নৌপথ অবরোধ, তিন এমপির কুশপুত্তলিকা দাহ ইত্যাদি সাম্প্রতিক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
এছাড়া পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ইউপিডিএফের সংগঠক সুমেন চাকমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়: ‘ইউপিডিএফ মনে করে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যম সন্তু লারমারা সরকারের অংশীদার হয়েছে বটে কিন্তু পাহাড়ে শান্তি আসেনি। এ প্রসঙ্গে ইউপিডিএফ নেতা সুমেন চাকমা রেডিও তেহরানকে জানান- সন্তু লারমাকে পার্বত্য পরিষদ থেকে অপসারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার ও বাঙালিদের সরিয়ে সন্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
রেডিও তেহরানের সংবাদ প্রতিবেদনটির বিস্তরিত নিম্নরূপ:
চুক্তির ১৬ বছর: পাহাড়ে শান্তি আসেনি; আবারো সহিংসতা, গুলিতে নিহত ১
২ জুলাই (রেডিও তেহরান): পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষরের ১৬ বছর পার হলেও শান্তি ফিরে আসেনি পাহাড়ে। পাহাড়ি জাতিসত্ত্বা আর বাঙালির রক্তে এখনো সিক্ত হচ্ছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবানের মাটি।
সর্বশেষ ঘটনায় আজ (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ন’টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার পাঁচবাড়ী এলাকায় মিঠুন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। মিঠুন চাকমা দীঘিনালা যুব সমিতির সদস্য ছিল। দীঘিনালা যুব সমিতির সভাপতি সমির চাকমা এ ঘটনার জন্য সন্তু লারমা সমর্থিত ‘জেএসএস’-কে দায়ী করেছেন।
এর আগে, ২৯ জুন হত্যা করা হয় সংস্কারপন্থী দলটির পানছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সুপন চাকমা ওরফে সাগর বাদশাকে।
ওদিকে, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ সমর্থিত গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম গত রোববার খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালন করেছে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, রাঙামাটিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার নামে অবৈধ ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া বন্ধ করা ও রামগড়ের ম্যাম্রা কার্বারী পাড়া থেকে ৫০ পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম এ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময়, খাগড়াছড়িতে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের গুলিবর্ষণে চঞ্চলা চাকমা নামে এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়। সংঘর্ষে পুলিশ ৯৪ রাউন্ড রাবার বুলেট এবং ২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আগের দিন শনিবার খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে চেঙ্গী চত্বর এলাকায় খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দিপংকর তালুকদার ও বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুরের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।
এরও আগে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাঙ্গামাটি শহরে ডা. তুষার কান্তি নাথ নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে একদল অস্ত্রধারী বাঙালি যুবক।
ঘটনার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএ শুক্রবার থেকে ৭২ ঘণ্টার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ কর্মসূচি অনুযায়ী প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ছাড়া আন্তঃ ও বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে আন্দোলন কর্মসূচি ১০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে, ভূমি মালিকানা বিরোধক কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বাঙালিদের আশ্বস্ত করে বলেন, যারা পাহাড়ে বসবাস করে এখানকার উন্নয়ন করছেন এবং এ অঞ্চলের সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন তাদের কোনো ক্ষতি হোক তা সরকার কখনই চায় না।
মঙ্গলবার বান্দরবান সফরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ আশ্বাস দেন।
তবে, ইউপিডিএফ মনে করে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যম সন্তু লারমারা সরকারের অংশীদার হয়েছে বটে কিন্তু পাহাড়ে শান্তি আসেনি। এ প্রসঙ্গে ইউপিডিএফ নেতা সুমন চাকমা রেডিও তেহরানকে জানান- সন্তু লারমাকে পার্বত্য পরিষদ থেকে অপসারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার ও বাঙালিদের সরিয়ে সন্মানজনকভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে, সেনা প্রত্যাহার ও বাঙালিদের পুনর্বাসন প্রশ্নে একমত নন অনেকে।#