লংগুদু হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ ৬ দফা দাবি খাগড়াছড়ি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটির

0

খাগড়াছড়ি : রাঙামাটির লংগুদু হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্ত, হামলার উস্কানিদাতাদের বের করে উপযুক্ত শাস্তি, হামলা-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে খাগড়াছড়ি ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ কমিটি।

Khagrachariঅন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে- নিজের জায়গায় নিরাপদে ও ভীতিমুক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা এবং দেশের অন্যান্য অংশের মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও জুম্ম জনগণের অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা; লংগুদুতে তিন পাহাড়ি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে পরিপূর্ণ ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা; লংগুদু হামলার ঘটনা নিয়ে স্বেতপত্র প্রকাশ ও এতে সরকারের মধ্যে থেকে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের অপরাধ উন্মোচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;  ক্ষতিগ্রস্তদের যৌক্তিক শর্ত পূরণপূর্বক যথাযথ ক্ষতিপূরণ সহকারে নিজ জায়গায় পূনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের হামলার শিকার হতে না হয় তার জন্য নিরাপদ ও ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া।

লংগুদু ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণের পর খাগড়াছড়িতে ফিরে গত রবিবার (১১ জুন) শহরের মহাজনপাড়াস্থ টঙ রেস্টুরেন্ট এন্ড কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা উপরোক্ত দাবিগুলো জানান।

উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী ধীমান খীসা।

এতে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান চঞ্চুমনি চাকমা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঘটনাস্থল ঘুরে ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আলোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছি যে, দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা ধরে পাহাড়ি গ্রামে হামলা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। এই সময় প্রশাসন আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের বাধা প্রদানই করেনি। বরং আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছ থেকে এই তথ্যই পেয়েছি যে, হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করার সময় সেনাবাহিনী একটি দল হামলাকারীদের পাশে বা সাথে সাথে ছিল। হামলার সময় তাদের ভুমিকা হামলাকারীদের সক্রিয়ভাবেই প্ররোচনা করার মতো ছিল বলে আমরা জেনেছি। এছাড়া হামলাকারীদের হাতে গান পাউডারুসহ স্প্রে করার শিশি বা বোতলে বহনযোগ্য জাতীয় দাহ্য পদার্থ ও হাতে পেট্রোল ও  আগুন  লাগানোর উপাদান বা বস্তু ছিলো।

এতে আরো বলা হয়, লংগুদু ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, কোনো সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এই আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ও একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলনকারী সংগঠনসমূহকে চাপের মধ্যে রেখে জুম্ম জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য এতে রয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে খুবই মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। জনগণের মধ্যে এখন ও ভীতি ও শংকা দূর হয়নি। সরকারের অপ্রতুল সহায়তা এলাকাবাসী গ্রহণ করেনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী প্রথমে সরকারের কাছে তাদের জীবন ও সম্পদের পূর্ণ নিশ্চয়তা চায়। বারবার তাদের ঘরবাড়ি পুড়ে যাক, বারবার তাদেরকে জীবন মূঠোয় করে পালিয়ে যেতে হোক, এটা তারা চায় না। জীবন ও সম্পদের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে সরকারি ত্রাণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে আমরা জেনেছি।

প্রেস ব্রিফিং থেকে ত্রাণ কমিটির নেতৃবৃন্দ লংগুদু হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে খাগড়াছড়িবাসিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন, লংগুদুবাসিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের সহযোগিতার জন্য ত্রান বিতরণ কমিটি এলাকায় এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহ করছে বলেও তারা জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন সর্বোত্তম চাকমা ও চঞ্চুমনি চাকমা চাকমা।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More