লংগুদু হামলার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ-এর ডাকে অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালিত, কুদুকছড়িতে গণহারে পাহাড়িদের মারধর
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটির লংগুদুতে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলার প্রতিবাদে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর ডাকে রাঙামাটি জেলায় আজ ১৯ ফেব্রুয়ারী শনিবার অর্ধ দিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।
তবে অবরোধ কর্মসূচী বানচাল করতে সেনাবাহিনী গত রাত ও আজ সকালে (১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারী) কুদুকছড়ির বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে গণহারে লোকজনকে মারধর করে। এদের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
সেনা সদস্যরা গত রাতে কুদুকছড়ি হেডম্যান পাড়ায় শুক্ররাজ চাকমা (৪০), জ্ঞান রাজ চাকমা (৩৮), বীরেন্দ্র চাকমা ওরফে জামুরো (৩০) ও শান্তি প্রিয় চাকমা এই চার ব্যক্তিকে মারধর করে। এছাড়া কুদুকছড়ি মধ্য পাড়ায় সেনারা হানা দিলে সেখানে পাঁচ ব্যক্তি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন৷ এরা হলেন রাঙাচান চাকমা পিতার নাম চান্দু চাকমা, গ্রাম নাড়েইছড়ি, দিঘীনালা; তিনি কুদুকছড়ি মধ্যপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন; সজীব চাকমা (২২) পিতার নাম সুরেন্দ্রলাল চাকমা; বান্দজ্যা চাকমা (২৫) পিতার নাম বুদ্ধ চরণ চাকমা; মেঘনাদ চাকমা (৩২) পিতার নাম কৃপাধন চাকমা; ও এসএসসি পরীক্ষার্থী নিপন চাকমা (১৭) পিতার নাম কৃপাধন চাকমা।
আজ সকাল আনুমানিক সাড়ে ন‘টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল কুদুকছড়ি খামার পাড়ায় গিয়ে দশ জুম্মকে মারধর করে৷ এরা হলেন মঙ্গল দাশ চাকমা, ২০, পিতার নাম কৈলাশ দাশ চাকমা, রূপায়ন চাকমা, ২৫, পিতার নাম ধর্ম চন্দ্র চাকমা, তঙ্গ মনি চাকমা, ৪৫, পিতার নাম বাত্যা চাকমা, সোনায়ে চাকমা, ১৭, পিতার নাম অর মনি চাকমা, মিন্টু চাকমা, ১৮, পিতার নাম কালা রাম চাকমা, প্রীতি ময় চাকমা, ৩০, পিতার নাম বিনয ভূষণ চাকমা, বিটন চাকমা, ১৮, পিতার নাম মনি চাকমা, মঙ্গল রাজ চাকমা, ২২, পিতার নাম তত্তুরো চাকমা, কিষ্ট রাজা চাকমা, ৩০, পিতার নাম তুত্তুরো চাকমা ও যামিনী চাকমা, ৪০৷
অন্য একটি হামলায় সেনারা কুদুকছড়ি উপর পাড়ায় বেশ কয়েক জনকে লাঠিপেটা করে৷ তাদের মধ্যে দু‘জনের পরিচয় জানা গেছে৷ এরা হলেন ভাগ্য ধন চাকমা, ২৭, পিতার নাম পূর্ণ কুমার চাকমা ও ভদ্র সেন চাকমা ওরফে ফরাইয়া, ২২, পিতার নাম ছন্দ চাকমা৷ এ সময় গ্রামবাসীরা সেনাদের ভয়ে যে যেদিকে পারে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়৷
এরপর সেনা সদস্যরা ঐ গ্রামের কার্বারী কান্দর সিং চাকমার বাড়িতে ঢুকে সাত জোড়া বুরগি (কোমড়ে বোনা কাপড়) ও রবি চন্দ্র চাকমার বাড়ি থেকে চারটি এনার্জি সেভিং বাল্ব নিয়ে যায়৷
এদিকে, আজ সকালে ইউপিডিএফ-এর সুবলং অফিসে গিয়ে পুলিশ ইউপিডিএফ এর নেতা কর্মিদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়।
গ্রেফতার:
সেনারা গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার কুদুকছড়ির প্রতিবাদ সমাবেশে আগতদের ওপর হামলা ও মারধরের পর পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে৷ আটককৃতরা হলেন বারেন্দ্র চাকমা (৩২) পিতার নাম সমাচরণ চাকমা, গ্রাম খামার পাড়া, সাপছড়ি, তিনি পেশায় সিএনজি ড্রাইভার; রূপমনি চাকমা (২৫) পিতার নাম থাংগুলো চাকমা, গ্রাম খামার পাড়া, তিনিও পেশায় সিএনজি ড্রাইভার; জয়বো চাকমা (৩২) পিতার নাম উদল্যা চাকমা, গ্রাম চংড়া ছড়ি, তিনি কুদুকছড়ি বাজারের ঝাড়ুদার; জ্ঞানলাল চাকমা (৩২) পিতার নাম জুরন্ত কুমার চাকমা, গ্রাম নাঙেল পাড়া, ঘিলাছড়ি ও শুভ দ্বীপ চাকমা (১৫) পিতার নাম মৃত. নিগিরাধন চাকমা, সে ঘিলাছড়ি হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
গতকাল সেনা ও ভিডিপির সদস্যরা ইউপিডিএফ-এর বিক্ষোভ মিছিলে হামলার পাশাপাশি কুদুকছড়ি বাজারে পাহাড়িদের দোকানে ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়৷ এছাড়া তারা ইউপিডিএফ-এর অফিসের সাইনবোর্ড নামিয়ে দেয় ও অফিসের কম্পিউটার, হ্যান্ড মাইক ও আলমিরা ভাঙচুর করে এবং বহু মূল্যবান দলিলপত্র নিয়ে যায়।
ইউপিডিএফ রাঙামাটি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক শান্তি দেব চাকমা শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী বানচাল করতে সেনাবাহিনী যেভাবে বর্বর গণনির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর হাতে চিরকাল জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না৷ পৃথিবীতে ন্যায়সঙ্গত কোন আন্দোলন পৈশাচিক শক্তি দিয়ে দমন করা যায়নি৷ পার্বত্য চট্টগ্রামও তার ব্যতিক্রম হবে না।
তিনি লংগুদুতে সেটলার হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাবের আলীর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান।
গতকাল ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির কোন কোন সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তদন্ত রিপোর্ট কতটুকু নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ট হবে সে ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেন। ইউপিডিএফ-এর রাঙামটি জেলার প্রেস বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সোনামনি চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।