লক্ষ্মীছড়িতে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা রুইখই মারমার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
সিএইচটিনিউজ.কম
লক্ষ্মীছড়ি (খাগড়াছড়ি): খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়িতে সেনা-প্রশাসনের বাধার মধ্যেও আজ ২ অক্টোবর ২০১৪, বৃহস্পতিবার ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ রুইখই মারমার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের ব্যানার শ্লোগান ছিল ” ভীরু কাপুরুষ বিপ্লবীর প্রাণ ছিনিয়ে নিলেও চেতনার মৃত্যু নেই, মুক্তির আকাঙ্খায় পার্বত্য চট্টগ্র্রামে আবির্ভুত হবে শত সহস্র রুইখই”।
অনুষ্ঠান বানচাল করে দেয়ার লক্ষ্যে সকাল থেকে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। দুল্যাতলী সহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী স্মরণসভা অনুষ্ঠানে আসার সময় লোকজনকে প্রকাশ্যে বাধা দেয়। যদিও উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে লিখিত অবগতিপত্র দেওয়া হয়েছিল। ফলে অনেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শত শত লোক লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউয়িনের যতীন্দ্র কার্বারী পাড়া থেকে মিছিল সহকারে অনুষ্ঠানস্থল লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদরে যেতে চাইলে পুলিশ বাদী পাড়া নামক স্থানে তাদেরকে আটকিয়ে দেয়। ফলে সেখানেই রাস্তার উপর স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। প্রথমে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডএফ) এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে ও আপ্রুসি মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সচিব রিপন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুকনাছড়ি মৌজার হেডম্যান সুপ্রীতি বিকাশ চাকমা সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা স্মরণসভা অনুষ্ঠানে বাধাদানের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শহীদ রুইখই মারমার খুনীদের মুখোশ উম্মোচন হওয়ার ভয়েই সেনাবাহিনী ও প্রশাসন আজকের এই স্মরণসভা অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে রুইখই মারমার হত্যাকান্ডের সাথে সেনাবাহিনীর যোগসাজশ রয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রুইখই মারমাকে হত্যার ৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও হত্যাকারীদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। খুনীরা এখনো প্রকাশ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আগলে রেখেছে। ফলে তারা খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায় সহ নানা অপকর্ম সংঘটিত করছে। বক্তারা অবিলম্বে রুইখই মারমার খুনী বোরকা পার্টির সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধের দাবি জানান।
বক্তারা রুইখই মারমার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, রুইখই মারমা একজন সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের নাম। তিনি আজীবন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এবং জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করে গেছেন। ভূমি বেদখল এবং সেনা নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার। যার কারণে সেনা-সন্তু চক্র পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে।
বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, রুইখই মারমার খুনীদের জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না। কৃত অপরাধের জন্য তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
বক্তারা রুইখই মারমার আদর্শ ও চিন্তাকে সমুন্নত রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের বাঁচার একমাত্র দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সমবেত জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।