লক্ষ্মীছড়িতে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে পিসিপি

0

লক্ষ্মীছড়ি : খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ জুন ২০১৮) সকাল সাড়ে ১০টায় লক্ষ্মীছড়ি সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লক্ষীছড়ি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্ধ শতাধিক কৃতি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

‘শিক্ষা হোক জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার, জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনে এগিয়ে এসো ছাত্র সমাজ’ এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পিসিপি লক্ষীছড়ি উপজেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক নয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক পাইসুই মং মারমার সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর লক্ষীছড়ি ইউনিটের সংগঠক আপ্রুসি মারমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বরুন চাকমা ও ৩নং বর্মাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হরি  মোহন চাকমা প্রমুখ।

পিসিপি’র দলীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। সংগীত পরিবেশন শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, একটি জাতি পরিপূর্ণ বিকাশে শিক্ষা হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সুতরাং সে শিক্ষাকে গ্রহণ করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য শিক্ষাগ্রহণ করলে হবে না, সুশিক্ষা অর্জন করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে সামিল হতে হবে।  দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নিপীড়িত-নিযার্তিত জাতিকে শোষণ-বঞ্ছনার হাত থেকে মুক্ত করতে ছাত্র সমাজকে লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। দেশে বিসিএস পরীক্ষা থেকে সকল ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশে এর থেকে বড় লজ্জাকর বিষয় কি আর হতে পারে! তারা বলেন, এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় সকল বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত রয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক আমলারা। কিন্তু সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কিংবা যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বক্তারা দেশের এক শ্রেণীর মানুষ শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে উল্লেখ করে বলেন, প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো অবাধে চালু রয়েছে প্রাইভেট-কোচিং ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ঠিকমত পাঠদান করা হয় না। টাকা না থাকায় সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রাবাস, যাতায়াতে সু-ব্যবস্থা, শিক্ষা সামগ্রিক ও অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর থেকে ঝড়ে পড়ছে।

বক্তারা আরো বলেন, শাসক-গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের সুবিধা মত ব্যবহার করতে চাচ্ছে। ছাত্র সমাজের প্রগতিশীল চিন্তাধারাকে ধ্বংস করতে একটা শ্রেণীকে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবাধে মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাহাড়িদের মধ্যেকার একটি প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণীকে দিয়ে ছাত্র সমাজকে আন্দোলন থেকে বিচ্যুত রাখতে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে শাসকশ্রেণী। তাই এসব বিষয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সজাগ ও  সতর্ক থাকতে হবে।

বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন ও সকল ধরনের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
———————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More