লক্ষ্মীছড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত, দপ্তরি দিয়ে চলছে পাঠদান
সিএইচটিনিউজ.কম
রফিকুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি দিয়ে পাঠদান ও শিক্ষক সংকটের কারণে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও মাত্র ১ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের কার্যক্রম। ফলে সমাপনী পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা।
সরেজমিন দেখা যায়, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বিনাজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কাসের সময় বইপত্র নিয়ে মাঠে ও গাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উদয় চাকমা পঞ্চম শ্রেণির কাস ও বিদ্যালয়ের দপ্তরি কেউপ্রু মারমা চতুর্থ শ্রেণির কাস নিচ্ছেন। একই চিত্র দেখা গেছে, মুক্তাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শুকনাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া শুকনাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮ শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে শান্তিময় চাকমা নামে একজন সহকারী শিক্ষক।
স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, অন্য উপজেলা থেকে শিক্ষক নিয়োগ ও নিয়োগ পাওয়ার পরপরই জেলা পরিষদে তদবির করে শিক্ষকরা তাদের সুবিধাজনক স্কুলে বদলি হয়ে যাওয়ায় এ উপজেলায় একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। বিনাজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উদয় চাকমা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৩। তিনি একাই ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। সদরে কোনো মিটিং থাকলে ওই দিন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়।
মুক্তাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কমিতাময় চাকমা জানান, ২০১২ সালের ১৮ জুলাই থেকে বিদ্যালয়ে একাই পড়াচ্ছেন। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নিউটন চাকমা পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুরো মাসে ২-৩ দিনের বেশি কাস হয় না। বিনাজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি চাইবাই মারমা জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে একাধিক মহলে দেনদরবার করেও কোনো ফল হয়নি।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা অভিযোগ করেন, শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঘুষ নিয়ে বহিরাগতদের নিয়োগ দেওয়ায় অনেকেই কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে সুবিধাজনক স্থানে বদলি হয়ে যান। তিনি আরও জানান, বহুবার জেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আকবর আলী উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, উপজেলার যতিন্দ্র কার্বারী পাড়া, নোয়াপাড়া, দণ্ডি পাড়া, শুকনাছড়ি, লেলাং পাড়া, ফুত্যাছড়ি ও জুর্গাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত কয়েক বছর প্রধান শিক্ষক নেই। এসব বিদ্যালয়সহ মরাচেঙ্গী পাড়ার বিদ্যালয়গুলোয় মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে। এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রামেন্দ্র নাথ পোদ্দার জানান, শিক্ষক সংকট দূরীকরণে চেষ্টা চলছে।
সৌজন্যে: দৈনিক আমাদের সময়