লে.ফেরদৌসসহ তার দোসরদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ঢাকায় ৪ নারী সংগঠনের বিক্ষোভ প্রদর্শন
সিএইচটিনিউজ.কম
ঢাকা প্রতিনিধি: হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ১৯ বছর পূর্ণ হবার দিবসে আজ ১২ জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪ নারী সংগঠন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।
‘অবিলম্বে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে’ হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক নারী সমাজ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি এ ৪ সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে আবেগজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য দিয়েছেন কল্পনার ভাই কালিন্দি কুমার চাকমা।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমার সভাপতিত্বে এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা, বাংলাদেশ নারী মুক্তি’র সভাপতি সীমা দত্ত, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভানেত্রী কাজলী ত্রিপুরা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল চাকমা। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাজেক নারী সমাজের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা, জ্যোৎস্না রাণী চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা প্রমুখ।
অপহরণের ১৯ বছর পূর্ণ হলেও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করা, চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস ও তার দোসরদের বিচার না হওয়ায় সমাবেশে বক্তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না দিয়ে উল্টো তাদের রক্ষার্থে নানা টালবাহানা, ডিএনএ টেস্ট-এর শর্ত জুড়ে দিয়ে তদন্ত ও শুনানির নামে সময় ক্ষেপণের অভিযোগ করেন বক্তারা। পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াটি বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের পর আরও বহু লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে চলেছে বলে তারা ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানান। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সাথে সেটলার দ্বারা পাহাড়ে নারী ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি ও খুন বেড়ে যাচ্ছে বলেও তারা সমাবেশে জানান। বক্তারা বলেন, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে। সরকার এসব অপরাধের সুষ্ঠ বিচার না করায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, আরও অপকর্ম করতে উৎসাহিত হয় বলেও তারা মন্তব্য করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে কল্পনা চাকমা’র বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা ১৯৯৬ সালের অভিশপ্ত দিনটিতে কিভাবে তার প্রিয় ছোটবোন কল্পনা চাকমাকে সন্ত্রাসী দস্যু কায়দায় লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস ও তার দোসরা দরজা ভেঙে অপহরণ করে তার বর্ণনা দেন। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি, তাকে উল্টো হয়রানি ও নাজেহাল করা হয় বলে তিনি সমাবেশে জানান। কালিন্দি কুমার চাকমা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার বোন কোথায় আছে বা কী হয়েছে, তা জানতে পারবো। তিনি সরকারের কাছে তার ছোট বোন কল্পনা চাকমা অপহরণের সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও অপহরণকারীদের শাস্তির দাবি জানান।
গণতান্ত্রিক যুবফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা বলেন, তৎকালীন বাঘাইছড়ি নির্বাহী কর্মকর্তা, তৎকালীন রাঙামাটি ব্রিগেড কমান্ডার ও এসপিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কল্পনা চাকমা অপহরণের রহস্য উদঘাটন হবে। তিনি বলেন, কল্পনা অপহরণের বিচার ও শাস্তি হলে অপরাধীরা ধর্ষণ ও খুন করতে সাহস পেত না।
ইউপিডিএফ নেতা নতুন কুমার চাকমা বলেন, সেনাবাহিনী সেটলারদের মদদ দিয়ে যেমনি ভূমি বেদখলের সাথে যুক্ত রয়েছে, তেমনি তারা যৌথভাবে পাহাড়ে নারী নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানী করে যাচ্ছে। তিনি বলেন পাহাড়ে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে অব্যাহত সংগ্রাম চলবে।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমাদত্ত বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণের দু মাস পূর্বে আমার সাথে পরিচয় হয়। কিন্তু আমি কখনো ভাবতে পারিনি এভাবে তিনি সেনা কর্তৃক অপহরণে শিকার হবেন। তিনি তার অপহরণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। তিনি নারী মুক্তির পক্ষ থেকে অপহরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের সুষ্ঠু বিচার না হলে বিক্ষুব্ধ জনগণ ক্ষেপে উঠবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী নারী নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি কল্পনা চাকমা অপহরণের তদন্তে টালবাহানা ও সময় ক্ষেপণ না করে সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসসহ তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে তা মিছিলের রূপ নেয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব হতে বের হয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসের দিকে যায়। কলাভবন প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। বিকেলে শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে কল্পনা চাকমার বক্তৃতার ভিডিও প্রদর্শন ও সংহতি সভা রয়েছে।
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।