শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়িতে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে ইউপিডিএফ

0

খাগড়াছড়ি : “শহীদের মহান আত্মবলিদানে নিপীড়িত জনতার সংগ্রাম এগিয়ে যায় বিজয়ের পথে” এই শ্লোগানে সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদ মিঠুন চাকমার স্মরণে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি ইউনিট।

আজ রবিবার (১৪ জানুয়ারি ২০১৮) বেলা ২টার সময় খাগড়াছড়ি সদরস্থ স্বনির্ভর মাঠে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলা ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সভা শুরুতে মিঠুন চাকমাসহ অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে যারা নিজেকে আত্মবলিদান দিয়েছেন তাদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক সচিব চাকমার সভাপতিত্বে ও জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা, ইউপিডিএফ’র বান্দরবান জেলা সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, মহালছড়ি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমা, লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান প্রবীল কুমার চাকমা, পেরাছড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, ভাইবোন ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান পরিমল ত্রিপুরা ও নুনছড়ি মোজা হেডম্যান ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা।

স্মরণসভায় সোনা রতন চাকমা বলেন, মিঠুন চাকমাকে আমি যতুটুকু জানি সে একজন তরুণ প্রজম্মের আদর্শীক মেধাবী সৈনিক। ৩জানুয়ারি তার মৃত্যুর সংবাদ আমাকে হতবাক করে দিয়েছিল। মহালছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক যখন ভূমি বেদখল চলছিল সেই সময় প্রতিরোধে মিঠুন চাকমার ভূমিকা অতুলনীয় ছিল।  তিনি জনগণকে সংগঠিত করে ভূমি বেদখল বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। যারা এমন মেধাবী নেতাকে খুন করেছে তাদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

তপন বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, মিঠুন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতীয় মুক্তির স্বপ্ন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধারণ করেছিলেন। তিনি নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতেন। আমি মনে করি হত্যাকারীরা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। লক্ষ লক্ষ মিঠুনের জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রামে হবে। মিঠুন চাকমার হত্যার বিচার আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

পরিমল ত্রিপুরা বলেন, মিঠুন চাকমাকে যারা খুন করেছে তারা জুম্ম মেধাকে হত্যা করেছে। তিনি শুধু জুম্মদের অধিকার নিয়ে কথা বলেননি, তিনি জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন, লেখালেখি করেছেন। আমি এই স্মরণসভা থেকে দাবি জানাচ্ছি মিঠুন চাকমার হত্যাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

সুপার জ্যোতি চাকমা মিঠুনকে স্মরণ করে বলেন, মিঠুন চাকমা আমার ব্যাক্তিগত জীবনে খুব কাছের মানুষ ছিলেন। আমরা একসাথে লড়াই করেছি, মিছিলে শ্লোগানে গলা ফাটিয়েছি। তিনি মিঠুন চাকমার আদর্শ লালন করে তার শূণ্যটা পূরণের জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, মিঠুন চাকমাকে হত্যা করতে পারলেও তাঁর বিপ্লবী চেতনাকে হত্যা করতে পারবে না। মিঠুন চাকমা আমাদের মাঝে না থাকলেও তার আদর্শ চেতনা এই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মাঝে চির অম্লান হয়ে থাকবে। মিঠুন চাকমার আদর্শ লালন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের হাজারো মিঠুন চাকমা জন্ম হয়ে জনগণের মুক্তির আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, মিঠুন চাকমা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য আন্দোলন করেননি, তিনি দেশের উত্তর অঞ্চলে জাতিসত্তার অধিকারের জন্য লড়াই করে গেছেন।

মিঠুন চাকমার প্রতি লাল সালাম জানিয়ে ইউপিডিএফের বান্দরবান জেলা নেতা ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কিছু কিছু মৃত্যু বেলে হাঁসের পালকের চেয়ে হলকা আর কিছু কিছু মৃত্যু থাই পাহাড়ের চেয়েও ভারী। শহীদ মিঠুন চাকমার মৃত্যুর হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের হাজারো পাহাড়ের চেয়েও ভারী।

তিনি বলেন মিঠুন চাকমা ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ে থাকাকালীন তার ব্যক্তিগত চিন্তা না করে সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন। রাত জেগে জেগে পড়া লেখা করতেন। তিনি সংগঠনের বলিষ্ঠ এক কন্ঠস্বর ছিলেন।

মিঠুনের মৃত্যু হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শোককে শক্তিতে পরিণত করে শাসক গোষ্ঠীর সকল ধরনের ষড়যন্ত্রকে নসাৎ করে জনগণের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে। শাসকগোষ্ঠীর মনে রাখা দরকার, অস্ত্র দিয়ে, বন্দুকের নল দেখিয়ে জনগণের প্রকৃত আন্দোলনকে কখনো করা যায় না।পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের অধিকার ছিনিয়ে আনবেই।

স্মরণসভার সভাপতি ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা শহীদ মিঠুন চাকমার দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসার সময় লোকজনকে সেনা-প্রশাসনের বাধা প্রদানের কঠোর সমালোচনা করেন এবং চিহ্নিত হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান।

তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, মিঠুন চাকমার হত্যাকারীদের যদি গ্রেপ্তার ও শাস্তি দেওয়া না হয় তাহলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। মিঠুন চাকমার শোক গণবিক্ষোভে পরিণত হবে।

তিনি দালাল প্রতিক্রিয়াশীলদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৭১-এর দালালদের যেমনি ৪০ বছর পর হলেও ফাঁসিতে ঝুলতে হচ্ছে, ঠিক তেমনি যারা জুম্ম হয়ে জুম্ম ধ্বংসের কাজে লিপ্ত রয়েছে, যারা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করেছে তাদেরও একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তিনি জাতি ধ্বংসের সাথে যারা লিপ্ত, যারা সরকারের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করে দিচ্ছে তাদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

সভা থেকে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও জনগণের উপর শাসন-শোষণ, নির্যাতন বন্ধ করার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

স্মরণসভা শেষে সন্ধ্যায় মিঠুন চাকমার স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More