শহীদ রূপক চাকমার ১০ম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত : আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি,সিএইচটিনিউজ.কম
আজ ২১ সেপ্টেম্বর, বুধবার শহীদ রূপক চাকমার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয়েছে৷ নারাঙহিয়ার রেডস্কোয়ারে বিকাল ৩.৩০ টায় প্রবীণ শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেন। উন্মোচন শেষে উদ্বোধক অনন্ত বিহারী খীসা, শহীদ রূপক চাকমার পিতা বিমলেন্দু চাকমা ও দু‘জন শিশু বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে রূপক চাকমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। এর পরপরই অনন্ত বিহারী খীসার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষ হয়।
এরপর শহীদ রূপক চাকমার স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক কালোপ্রিয় চাকমা। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি পৌর কাউন্সিলর মিলন দেওয়ান মনাঙ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক ধীমান খীসা, দেওয়ান বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি দীপায়ন চাকমা, ল্যাম্পপোষ্টের সম্পাদক নাহিদ সুলতানা লিসা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম এম পারভেজ লেলিন। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও রূপক চাকমার সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান।
অনুষ্ঠানে প্রবীণ শিক্ষাবিদ অর্ধেন্দু শেখর চাকমা, পানখাইয়া পাড়ার বিশিষ্ট মুরুব্বী ও সাবেক পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান কিরণ মারমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী ও খাগড়াছড়ি পৌর সভার সাবেক কমিশনার সরোজ কুমার চাকমা, ধর্মপুর আর্য্য বনবিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পূর্ণচন্দ্র চাকমা, ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রবিশংকর তালুকদার, অনন্ত মাষ্টার পাড়ার বিশিষ্ট মুরুব্বী জ্যোতিষজ্ঞান চাকমা ও মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রবীণ শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, রূপক চাকমা এলাকায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি পরিচিত নাম। তাঁর মৃত্যু কখনো প্রত্যাশিত ছিল না৷ তাঁর অকাল মৃত্যুতে পার্বত্যাঞ্চলের জনগণ অত্যন্ত
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি৷ আমরা প্রতিমুহুর্তে তার অভাব অনুভব করি।
তিনি আরো বলেন, রূপক চাকমার যে কর্মকান্ড, সমাজের প্রতি তার যে দরদ তাতে আমরা অভিভূত হয়েছি৷ আমরা সমাজের তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের বুক থেকে একজন জ্ঞানী মানুষকে হারিয়েছি।
তিনি বলেন, রূপক চাকমার এই স্মৃতি ভাস্কর্য দেখে এলাকার জনগণ তাঁকে এবং তার আদর্শকে স্মরণ করবে। তার সংগঠনের অনুসারীরা তার স্মৃতি ভাস্কর্য দেখে অনুপ্রাণিত হবে এবং অধিক মনোযোগী হয়ে সমাজ সেবার কাজে নেমে পড়বে৷ প্রয়োজনে মৃত্যুকেও তারা উত্সর্গীত করবে।
তিনি বলেন রূপক চাকমার মৃত্যুর মধ্যে ছিল আত্মত্যাগ। তাঁর মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে সে কতই মহান।
মিলন দেওয়ান বলেন, শহীদ রূপক চাকমা একজন বাস্তববাদী নেতা ছিলেন৷ তার স্মৃতি এখনো আমাকে তাড়িত করে৷ রূপক চাকমার চেতনায় উজ্জ্বীবিত হয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের লেবাসধারী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র তা আজো অব্যাহত রয়েছে৷ শেখ মুজিবর রহমান যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদেরকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে অস্বীকার করে চলেছেন।
তিনি বলেন, সরকার যেখানে নিপীড়কের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয় সেখানে আন্দোলন অবশ্যই জোরদার হবে৷ তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
ধীমান খীসা বলেন, রূপক চাকমার আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন৷ ছোটকাল থেকে আমি তাকে দেখে এসেছি৷ রূপক চাকমা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন কর্মী।
তিনি বলেন, রূপক চাকমা সমাজের জন্য, দেশের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন৷ তার এই আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, রূপক চাকমার মৃত্যু আমাদের মানসিকভাবে আমাকে খুবই পীড়া দেয়৷ আমাদের মধ্যেকার ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত অচিরেই বন্ধ হওয়া দরকার৷ এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত কারোরই কাম্য নয়। তাই এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের জন্য আমি সকল আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।
শহীদ রূপক চাকমার স্মরণে সন্ধ্যায় নারাঙহিয়ার রেডস্কোয়ারে অবস্থিত শহীদ বেদীতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
উল্লেখ্য যে, শহীদ রূপক চাকমা বিগত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ইউপিডিএফ-এর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে গিয়ে ২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পানছড়ি উপজেলার পুজগাঙের মধুমঙ্গল পাড়ায় সন্তু চক্রের সশস্ত্র হামলায় নিহত হন।