শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় পিসিপি’র ছাত্র সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম

আজ ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান সহ বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র সমাবেশ ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। খাগড়াছড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং অন্যান্য জায়গায় স্থানীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়।

খাগড়াছড়ি : আমরা বাঙালি নই, সংবিধানে জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে, পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি মেনে নাও এবং সেমুতাঙের গ্যাস বাইরে পাচার হতে দেব না” এই দাবিসমূহকে সামনে রেখে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আজ ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে খাগড়াছড়িতে ছাত্র সমাবেশ ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশটি খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদ মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন অনুমতি না দেয়ায় সেখানে সমাবেশ করা যায়নি। পরে সকাল ১১টায় স্বনির্ভর বাজার থেকে একটি র‌্যালী বের করা হয়। র‌্যালীটি চেঙ্গী স্কোয়ার যেতে চাইলে পুলিশ উপজেলা পরিষদ এলাকায় আটকিয়ে দেয়। পরে র‌্যালীটি সেখান থেকে ঘুরে নারানহিয়া, উপালি পাড়া, কলেজ পাড়া হয়ে শান্তি নিকেটন মাঠে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রেমিন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কনিকা দেওয়ান বক্তব্য রাখেন। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা থেকে সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী সমাবেশ ও র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে শান্তি নিকেটন মাঠ থেকে আবার র‌্যালী যোগে খবংপুয্যা ঘুরে স্বনির্ভর বাজারে গিয়ে শেষ হয়।

কুদুকছড়ি(রাঙামাটি) : রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে কুদুকছড়ি বাজার মাঠে সকাল ১১টায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমেন চাকমা ও রাঙামাটি জেলার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলু চাকমা৷ উপস্থাপনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সদস্য জ্যোতি চাকমা।

নানিয়ারচর : নানিয়াচর থানা কমিটির উদ্যোগে নান্যাচর উপজেলার রেস্ট হাউজ মাঠে দুপুর ১২টায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য টিটু বিকাশ চাকমা, নান্যাচর থানা শাখার সভাপতি বিঘ্ন খীসা, নান্যাচর কলেজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর থানা শাখার সভাপতি প্রিয়লাল চাকমা৷ সমাবেশ শেষে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়৷ ফলে মিছিল বের করা সম্ভব হয়নি।

কাউখালী : কাউখালী থানা কমিটির উদ্যোগে কাউখালী উপজেলার খাদ্য গুদাম মাঠ থেকে সকাল ১১ টায় এক মিছিল বের করা হয়৷ মিছিলটি কাউখালী হাইস্কুল মাঠ ঘুরে আবার খাদ্য গুদাম মাঠে গিয়ে এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি বিলাস চাকমা, কাউখালী থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ম্যাকলিন চাকমা, কাউখালীহাইস্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি উত্‍পল চাকমা প্রমুখ।

বরকল : সুবলং ইউনিয়নে সুবলং বাজার মাঠে সকাল ১১.০০ টায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক তাপুমনি চাকমা, জুরাছড়ি থানা শাখার সভাপতি প্রমোদ বিকাশ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জুরাছড়ি থানার প্রতিনিধি পরেশ চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর সুবলঙ ইউনিয়নের প্রতিনিধি বিকল্প চাকমা৷

বাঘাইছড়ি : পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি থানা শাখার উদ্যোগে রূপকারী স্কুল মাঠে সকাল সাড়ে ১১টায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি অটল চাকমা৷ এতে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য মিটন চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি থানা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অঙ্গদ চাকমা, রূপকারী এলাকার মরুব্বী শিশির বিন্দু চাকমা প্রমুখ৷

বান্দরবান জেলা:
শিক্ষা দিবস উপলক্ষে বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে র‌্যালী করার কথা থাকলেও প্রশাসনের বাধায় র‌্যালী করা সম্ভব হয়নি। পরে বান্দরবান জেলা সদরের বালাঘাটায় ইউপিডিএফ-এর অফিস কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা আহ্বায়ক অংথোয়াই মারমা। অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বান্দরবান জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক সজিব তঞ্চঙ্গ্যা
, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদকক প্রুচিংথোয়াই মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য বিক্রম তঞ্চঙ্গ্যা, ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর বান্দরবান জেলা সমন্বয়ক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা ও শুভাকাঙ্খী শান্তি বাবু খিয়াং প্রমুখ।

ঢাকা
শিক্ষা দিবস উপলক্ষে দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে থেকে এক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কলাভবন প্রদক্ষিণ করে টিএসসি ঘুরে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক সামিউল আলম বক্তব্য রাখেন।

উপরোক্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার সভ্য সমাজের মানুষের একটি মৌলিক অধিকার৷ সরকার সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের ভাষাগুলোর বিকাশ ঘটনো দুরের কথা, বরং সেগুলো ধ্বংস করার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিা লাভের অধিকারসহ নিজ জাতিসত্তার স্বীকৃতি লাভের জন্য ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হতে হবে৷

বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে জাতিসত্তার কোন স্বীকৃতি নেই৷ বাংলাদেশ কখনই এক জাতির দেশ নয়, এটি একটি বহুজাতি অধু্যষিত ও বহুভাষিক রাষ্ট্র৷ বাঙালি জাতি সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং প্রধান জাতি হলেও এদেশে ৪৫টির অধিক সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্ব রয়েছে৷ ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ প্রতিটি জাতিই দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রাখছে৷ অথচ মহাজোট সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালীএই বাক্যাংশ যুক্ত করে বাঙালি ভিন্ন বাংলাদেশের অন্য জাতি ও ভাষার জনগণের উপর উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে।

বক্তারা বলেন, সরকার দেশের জাতীয় সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দিচ্ছে৷ একইভাবে সেমুতাঙ গ্যাস সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদও বহু জাতিক কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

ভূমি বেদখল, সেনা-বিডিআর ক্যাম্প সমপ্রসারণ, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ সাজেক, রামগড়, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় জুম্ম জনগণকে উচ্ছেদ করে ভূমি বেদখল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ সেনা-আমলা প্রশাসনের প্রত্য-পরো মদদ ও প্ররোচনায় প্রতিনিয়ত এ তত্‍পরতা চলছে৷ ভূমি দস্যু, জাতীয় সম্পদ পাচারের সহযোগী সেনা কর্মকর্তা-আমলা-লুটেরাগোষ্ঠী নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামপ্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। বক্তারা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ছাত্র সমাজকে আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি মেনে নেয়া, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সেমুতাঙের গ্যাস স্থানীয় চাহিদা পুরণ না করে বাইরে পাচারের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর পদপে গ্রহণ করা, শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা ও বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি বাতিল করা, খাগড়াছড়ি কলেজের সনি্নকট শান্তি নিকেতন ছাত্রবাস সেনা নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে ফিরিয়ে দেয়া, বান্দরবান-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটির সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হোস্টেল সমূহ খুলে দিয়ে গরীব ও মেধাবী ছাত্রদের পড়াশুনার সুযোগ দেয়া, প্রাইমারি শিক নিয়োগে দুনর্ীতিবাজদের শায়েস্তা ও অযোগ্যদের নিয়োগ বাতিল করা, বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নামের অযোগ্য ব্যক্তিদের বরখাস্ত করা; শিক্ষা নিয়ে তাদের বাণিজ্য করতে না দেয়া, জেলা শহর এলাকায় ছাত্রদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু এবং ছাত্রদের কনসেশন দেয়া; চলাচল ও ছাত্রদের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী ছাউনি এবং স্থানে স্থানে স্পিড ব্রেক স্থাপন করা, সরকারি স্কুল ও কলেজসমূহে ছাত্র-ছাত্রীদের কমনরুমে পত্রিকা ও প্রয়োজনীয় বইপত্র সরবরাহ করার জোর দাবি জানান৷

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More