শ্রমজীবী ফ্রন্ট(পার্বত্য চট্টগ্রাম)-এর ১ম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বুকলেট প্রকাশ

0

সমাজ ও জাতি রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
[divider style="normal" top="20" bottom="20"]

ঢাকা : শ্রমজীবী ফ্রন্ট(পার্বত্য চট্টগ্রাম)-এর ১ম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ৮ পাতার একটি বুকলেট প্রকাশ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৩ আগস্ট) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে দিন ব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শুধু খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই জীবন নয়, সমাজ-জাতি রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ হোন- এই আহ্বানে ২ আগস্ট প্রকাশিত বুকলেটে ফ্যাক্টরিতে চাকরি জীবনের দুঃসহ চিত্র-অনিয়ম বৈষম্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘এক বিশেষ পরিস্থিতিতে সামাজিক জটিলতা আর কিছুটা পেটের দায়ে একদিন আমাদের গ্রাম-সমাজ ছেড়ে বাইরে পা বাড়াতে হয়। গ্রামের বাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল। আর্মি হানা দিতো, নিজের পরিচয় দিতে হিমশিম খেতে হতো (না ছাত্র, না চাকুরিজীবী), সন্দেহের চোখে পড়তাম, আর্মির সুবেদার-হাবিলদারদের চোখ রাঙানি অসহ্য হয়ে পড়েছিল, সাধারণ সেপাইরাও অপদস্থ করতো, ইচ্ছেমতো ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যেতো’।

‘পার্বত্য চুক্তির’ পর সমাজে রাজনৈতিক মতভেদ দেখা দেয়ার কারণে গ্রামে থাকতে গিয়ে নানা হেনস্থার কথাও বুকলেটে তুলে ধরা হয়েছে।

বিপুল জনশক্তি মিল ফ্যাক্টরিতে পড়ে থাকায় এই শক্তি সমাজ জাতির দুঃসময়ে তেমন কাজে আসছে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে বুকলেটে বলা হয়, “যেখানে এখন আমরা রুটি-রুজির জন্য পড়ে রয়েছি, সেখানেও বিভিন্ন চক্র ও গোষ্ঠীতে ভাগ করে আমাদের দুর্বল ও শক্তিহীন করার মতলবে বিভিন্ন সংস্থা সাংঘাতিকভাবে তৎপর, তা আমাদেরও চোখে পড়ে। কী পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বাইরে সবখানেই আমাদের শক্তিকে অকেজো করে রাখার ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। মনে হয়, আমাদেরকে বিনাশ না করলে তারা ক্ষান্ত হবে না”।

দুর্দশার কারণ হিসেবে এতে বলা হয়, ‘হাতে-গোনা মুষ্টিমেয় কিছু লোকের কারণে আজ আমাদের এ দশা! আমরা বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হয়ে ফ্যাক্টরিতে গতর খাটছি। আমাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবক উদ্যোগী হয়ে সমাজে ও আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলাম। আমরা থাকার কারণে সমাজের মেলা-মেজবান, দাহ-সাপ্তাহিক ক্রিয়া, ধর্মীয় অনুষ্ঠান নানা কাজ সম্পাদিত হতো অনায়াসে। এলাকায় বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ প্রতিরোধেও অংশ নিয়েছি। এখন বলতে গেলে আমাদের এলাকা পাড়া-গ্রাম অনেকটা খালি, ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সমাজের প্রধান শক্তি যুবা-যুবতীদের গ্রামে দেখা মেলে না। যারা প্রহরীর মতো পাড়া-গ্রাম পাহারা দেয়ার কথা, তারা ঢাকা-চট্টগ্রামে মালিকের মুনাফা বাড়াতে দিন-রাত মিল-ফ্যাক্টরিতে খেটে মরছি! এতে পারিশ্রমিক অনুসারে মাইনে পাই বা কত, অথচ বিপন্ন হচ্ছে পরিবার-সমাজ-জাতি’।

বুকলেটে সমাজের সুবিধাভোগী শ্রেণীর লোকজনের উদ্দেশ্যে বিদ্রুপ করে বলা হয়, আর যারা ভাল বেতনে চাকরি করছে, উপড়ি পায়, ক্ষমতাসীন দলের হাতে-পায়ে ধরে সুবিধা আদায় করতে ওস্তাদ, তারাও ‘যে লাউ সে-ই কদু’, আমাদের চাইতে কোন দিক দিয়ে উত্তম নয়। জাতির দুর্দশায় ‘গেল গেল!’ ‘শেষ শেষ!!’ রব তোলা আর আন্দোলনাকারীদের পাইকারি গাল-মন্দ, কিছু বস্তাপঁচা উপদেশ ছাড়া তাদের দেবার কিছুই নেই। আসলে তারা ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করতেও অক্ষম। তারা কিনাদেমাগ দেখায়! তাদের কেউ কেউ আবার “সুশীল সমাজ” “উচ্চপদস্থ” কর্মকর্তা কত কী পরিচয় দিয়ে সমাজে একটু দরও বাড়াতে চায়, আসলে কেউ অচেনা নয়। তাদের ঠিকুজি যারা জানার জানে! সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উচ্চ আসন পেতে  নানা কেরামতি ও ধান্দাবাজিতে পারদর্শী। নিজেরা “ক্রেস্ট” বানিয়ে বাড়িঘর সাজায়। ভাল খেয়ে-দেয়ে স্ফূর্তি করে, কখনও সখনও ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরও বেড়াতে যায়, দামিদামি জিনিস কেনা-কাটা করে। তাতে তাদের গর্বে মাটিতে পা না পড়ার অবস্থা, এ ধরনের হঠাৎ বড়লোকির কাজ-কারবারকে চাকমারা যথার্থই বলে, “ল্যুর শুগর চা’ল’ উগুরে উদানা”। অর্থাৎ ইতর হীনপ্রাণীকে উচ্চস্থানে তোলা সাংঘাতিক বেমানান ও অশোভন। জাতীয় স্বার্থে দশ/বিশ টাকা চাঁদা দিতেও তাদের গায়ে লাগে, বাড়িতে গেলে নানা কথা শোনায়। অথচ কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালে মদ-জুয়া আসরের মত যাবতীয় অকাজে। এরা সমাজ-জাতির কোন উপকারে আসে না। টাকা নেই বলে তারা আমাদের হেয় জ্ঞান করে। দেশপ্রেম আর মন্যুষত্ব নেই বলে সমাজে তারা অপাঙথেয়, উপহাস বিদ্রুপের বস্তু!

ফ্যাক্টরিতে নানা বৈষম্য, অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে এতে বলা হয়, ‘আমরা যে ফ্যাক্টরিতে কাজ করি, সেখানে বেতন-বোনাস-ছুটি পাবার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা নিয়ম কানুন ও জটিলতা। সময় মতো বেতন না পাবার কারণেও আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যা বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। বেতন পেতে না পেতে বড় অংশ দিতে হয় বাড়ির মালিককে, মুদির দোকানে মাসওয়ারি বাকী থাকে, অনেকে বাড়ি থেকে চাল আনিয়ে পুষিয়ে নেয়।

সন্তান-সন্ততিকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করবো, নিরাপদে সংসার করবো, সে অবস্থাও নেই। রাত-দিন খেটে মরি। ছুটি পাই না বৈসাবি উৎসব ও পূজা পার্বনে।

কোন কারণে একদিন কামাই করলে, অন্যায়ভাবে দুই দিনের বেতন থেকে কেটে নেয়। বরখাস্ত করার ভয় দেখায়। ট্রেড ইউনিয়ন না থাকায় সংগঠিত প্রতিবাদও নেই। কোন কোন ফ্যাক্টরির অবস্থা অত্যন্ত বাজে, দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। পর্যাপ্ত টয়লেটও নেই’।

প্রকাশিত বুকলেটে দাবির মধ্যে রয়েছে, শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে; ওভার-টাইমের নামে প্রতারণা বন্ধ করে ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে; নারী শ্রমিকদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নাইট-ডিউটি করানো যাবে না; মাতৃকালীন ছুটিসহ বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে হবে; সাভারে অন্যায়ভাবে আটক রিপন-সুনীলসহ গ্রেফতারকৃত ইউপিডিএফ-এর নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে; অবিলম্বে ধরপাকড় বন্ধ করে ‘১১দফা নির্দেশনা’ তুলে নিতে হবে; নব্য মুখোশবাহিনী ভেঙে দিয়ে মিঠুন-সূর্য বিকাশ চাকমার চিহ্নিত খুনীদের সাজা দিতে হবে এবং ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী কৃত্তিকা ত্রিপুরার ধর্ষক-খুনীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।

এতে ছাত্র-যুব-জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে,

* জাতীয় স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন!

* চিহ্নিত গণশত্রুদের বাড়াবাড়ি বরদাস্ত করবেন না, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন!

* সমাজে বৈষম্য দূর করতে এগিয়ে আসুন, জাতীয় স্বার্থে এক হোন!

* এক দলীয় পাতানো নির্বাচনের বিরোধিতা করুন!

 

নীচে পুরো বুকলেটটির স্ক্যান কপি দেওয়া হলো:

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More