খাগড়াছড়িতে পিসিপি'র আলোচনা সভা

ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তির ফাঁদে পা না দিয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান

0

pcp-program-2-12-16খাগড়াছড়ি: “সরকারের ষড়যন্ত্রেমূলক চুক্তির ফাঁদে পা নিয়ে আসুন পূর্ণস্বায়ত্তশানের আন্দোলন জোরদার করি” এই স্স্নোগানে খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর ২০১৬) বিকাল ৩ টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরেগ অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি সোনায়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্‌ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক ও পিসিপি’র সাবেক সভাপতি রিকো চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক চৈতালী চাকমা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, সরকার ষড়যন্ত্রমূলক পার্বত্য চুক্তি করে শান্ত্মির নামে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের মৌলিক অধিকারকে ছিনিয়ে নিয়েছে ও জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। আওয়ামি লীগ ও সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি উন্নয়নের শ্লোগানে প্রতি বছরে চুক্তি দিবসে শান্তি শোভাযাত্রা, শান্তি কনসার্টসহ বিভিন্ন নামে সরকার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বাজেট নিয়ে অর্থ লুন্ঠন করে জনগণকে বিভ্রান্তি করে চলেছে। এসবের ফাঁদে পা না দিয়ে অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।

বক্তাগণ বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হাওয়ার সময় পাহাড়িদের সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে যে লক্ষ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন হয়েছিল, দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে বা তাদের কিছু দুর্বলতার কারণে সে লক্ষ্যেই পৌঁছতে পারেনি। নেতৃত্বের ভুলের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে আজকের এই দুর্দশায় পড়তে হয়েছে।

তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মোঘল আমল থেকে কয়েকটি দফায় চুক্তি হয়েছে কিন্তু পার্বত্য চুক্তির মত এইভাবে জলাঞ্জলি দিতে হয়নি। কারণ চুক্তিটি সাংবিধানিক গ্যারান্টি ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই, ফলে যে কোন সময়ে চুক্তি বাতিল করা যাবে এবং জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় বর্তমানে আমাদেরকে কখনো উপজাতি, আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং পঞ্চদশ সংবিধানে জাতিসত্তাদের উপর উগ্র বাঙালি জাতিয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়।

বক্তারা বলেন, চুক্তিতে সেনাবাহিনী বাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহারের কথা থাকলেও নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই, সেটলারদের বিষয়েও কোন কিছুই উল্লেখখ করা হয়নি। চুক্তিতে জনগণের মৌলিক দাবি বিষয়ে অস্পষ্টতা ও দুর্বলতা থাকার কারণে আজ ১৯ বছরেও পূর্ণবাস্তবায়ন হয়নি বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

বক্তাগণ আরো উল্লেখ করেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের মধ্যে নিজ স্বার্থের জন্য দালাল, প্রতিক্রিয়াশীল বেড়ে চলেছে। তারা সরকারি দলের সাথে এবং শাসকগোষ্ঠীর সাথে আঁতাত করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্ত্মি ছড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রুখে দাঁড়ানোর জন্য জনগণকে আহ্বান করেন।

বক্তাগণ, সরকারের ষড়যন্ত্র ও প্রতারণামূলক চুক্তির ফাঁদে পা না দিয়ে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে ও সকল দুর্বলতা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে নামার জন্য আহ্বান জানান।

সভা থেকে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করার জন্য ছাত্র-যুব-নারীসহ সমাজের সকল স্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে একই শ্লোগানে জেলার পানছড়িতেও আলোচনা সভা ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পিসিপি’র পানছড়ি থানা শাখার উদ্যোগে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় পিসিপি’র পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি হিমেল চাকমার সভাপতিত্বে জুয়েল চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য তপন চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ চাকমা প্রমুখ।

এছাড়া পিসিপি’র লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার উদ্যোগে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদরে কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১:৩০টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়।
——————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More