সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিচার দাবিতে রামগড়ে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ

0

রামগড়, খাগড়াছড়ি ।। ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমুহের জানমাল রক্ষার্থে ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ চাই’ শ্লোগানে কুমিল্লা, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবিতে খাগড়াছড়ির রামগড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

আজ মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর ২০২১) সকাল ৯টায় ইউপিডিএফের রামগড় ইউনিটের উদ্যোগে রামগড় উপজেলা সদর এলাকায় এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক আপ্রুসি মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সদস্য শুভ চাকমা ও রামগড় উপজেলা সাধারণ সস্পাদক লিটন চাকমা।

সমাবেশে ইউপিডিএফ সংগঠক আপ্রুসি মারমা বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা হিন্দুদের দুর্গাপুজা মন্ডপ, মন্দির, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা, দেশকে অস্থিতিশীল করে সংখ্যালঘুদের বিতাড়ন করা।

তিনি বলেন, আমাদের লজ্জা হয় যখন দেখি একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশের সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। আসলে এই দেশের আইনের দুর্বলতা ও বিচারহীনতার কারণেই অপরাধীরা বার বার এভাবে হামলা করার সাহস পায়। অতীতে যেসব সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনার যদি সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না।

আপ্রুসি মারমা আরো বলেন, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া হামলা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সময় এসেছে নিপীড়িত সকল সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, সংঘবদ্ধ হয়ে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারি তাহলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো বার বার হামলা করার সুযোগ পাবে। তাই আত্মরক্ষার্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

যুব ফোরাম নেতা শুভ চাকমা বলেন, বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ধর্ম যার যার উৎসব সবার ইত্যাদি বলা হলেও কার্যত এ রাষ্ট্র এখন সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদ বহাল রেখে একটি রাষ্ট্র কখনো ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে না। রাষ্ট্রের এই সাম্প্রদায়িক চরিত্রের কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বার বার সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করার লক্ষ্যে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে সম্প্রতি কুমিল্লা, নোয়াখালীর চৌমুহনী, রংপুরের পীরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর পর পর হামলার ঘটনা ঘটলেও সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেনি। এ সরকার দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেই ফায়দা লুটতে চায়।

তিনি বলেন, যে সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ করা দরকার।

তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করে বলেন, দেশের ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করে জনগণের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। তারা নিজেরাই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে ক্ষমতার মসনদে যেতে চায়। তারা সংখ্যালঘু জাতি ও জনগণের মঙ্গল চায় না।

তিনি বলেন, এদেশের জনগণ একটি প্রকৃত অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র চায়, যেখানে কোনো ধর্মের বিভেদ থাকবে না, মানুষ যার যার ধর্ম নির্ভয়ে পালন করতে পারবে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে হামলাকারী দুর্বৃত্ত ও তাদের মদদদাতাদের আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, মন্দির পুনঃনির্মাণ করে দেয়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More