সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ-এর লাল পতাকা মিছিল

0

ডেস্ক রিপোর্ট, সিএইচটিনিউজ.কম

সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে এবং সংবিধানের(পঞ্চদশ সংশোধন)বিল ২০১১ প্রত্যাহারের দাবিতে খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় লাল পতাকা মিছিল ও লাল পতাকা উত্তোলন করেছে ইউপিডিএফতবে পুলিশ সকালে খাগড়াছড়ি শহরের নারাঙহিয়া, জেলা পরিষদ এলাকা এবং আলুটিলা, গুইমারাসহ বিভিন্ন এলাকায় উত্তোলন করা লাল পতাকা জোর করে নামিয়ে দেয়

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে আসা লোকজনকে পুলিশ মধুপুর ও চেঙ্গী স্কোয়ারসহ বিভিন্ন জায়গায় বাধা প্রদান করে৷ কৃষি গবেষণা ও কমলছড়ি থেকে আসা লোকজনকে পুলিশ চেঙ্গী স্কোয়ারে বাধা দেয়সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে যেতে বাধ্য করে৷ এরপর বিকাল ৪টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খবংপুজ্জ্যা ইয়ংস্টার ক্লাব থেকে একটি মিছিল বের করা হয়৷ মিছিলটি দক্ষিণ খবংপুজ্জে কাশেম সমিল এলাকায় গেলে পুলিশ সেখানে বাধা দেয়সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে আবারো মিছিলটি স্বনির্ভর বাজারে এসে শেষ হয়৷ সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক চরণসিং তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা

বক্তারা ৭২ সালে শেখ মুজিব কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের বাঙালি হতে নির্দেশ দেবার পরিণতি কী হয়েছিল তা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সমতল অঞ্চলের ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের জনগণ জাতিগতভাবে বাঙালি নন৷ তাদের প্রত্যেকের স্ব স্ব জাতীয় পরিচিতি ও সংস্কৃতি রয়েছে৷ চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না

বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতির জনগণ এই উগ্রজাতীয়তাবাদী জগাখিচুড়ি সংবিধান কখনো মেনে নেবে নাআমাদের পূর্ব পুরুষেরা কোন কালেই বাঙালি ছিলেন নাআমরা সংবিধানে নিজস্ব জাতিগত পরিচিতির স্বীকৃতি চাই।

বক্তারা বলেন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের জাতিগত পরিচয় মুছে দিয়ে ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে চিরতরে নিশ্চিহ্নকরার প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবর রহমান যেভাবে বাঙালি-ভিন্ন দেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতিগুলোর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মুছে দিয়ে জোর করে বাঙালি বানিয়ে এক জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যে ভুল করেছিলেন, তার কন্যা শেখ হাসিনাও এই বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করে সেই একই ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছেন৷ শেখ মুজিবর রহমানের মতো তাকেও এই ভুলের মাশুল পেতেই হবে

2.Red flag rallyবক্তারা অবিলম্বে সংবিধান থেকে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি” এই অংশটি বাদ দেয়ার দাবি জানান অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন

দিঘীনালা : দিঘীনালায় বেলা ১টায় নারিকেল বাগান থেকে লাল পতাকা মিছিল বের করা হয়৷ মিছিলটি দিঘীনালা উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদণি করে বাস স্টেশনের চৌমুহনীতে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দিঘীনালা উপজেলা শাখার সভাপতি রবিলাল চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবজিত্‍ চাকমা এতে বক্তব্য রাখেন

গুইমারা : গুইমারায় বিকাল সাড়ে ৪টায় লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়৷ সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিসের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়ে গুইমারা বাজার প্রদক্ষিণ করে শেষ হয় সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, সহ সভাপতি ক্যহাচিং মারমা, মাটিরাঙ্গা থানা শাখার আহ্বায়ক অংকন চাকমা

নান্যাচর : রাঙামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলার রেস্ট হাউজ দুপুর ১২টায় লাল পতাকা মিছিল বের হয়ে নান্যাচর বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার রেস্ট হাউজ মাঠে এসে শেষ হয়সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয় লাল চাকমাএছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি বিলাস চাকমা, নান্যাচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ খীসা, সাবেং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা ও নান্যাচর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সেন্ট্রু চাকমা৷ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নান্যাচর কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক রিপন চাকমা

এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার কাউখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে

এদিকে ইউপিডিএফ-এর প্রেস বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরন চাকমার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচী ৪ জুলাইয়ের পরিবর্তে আগামী ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছেএছাড়া একই দাবিতে আরো নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More