সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনের বিবৃতি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে চট্টগ্রামের ৯৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক, গবেষক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, লেখক, অভিনেতা, নাট্যকর্মী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, ছাত্র ও ব্যবসায়ী একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. জিন বোধি ভিক্ষু, নৃ-বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক সাদাফ নূর-এ ইসলাম, অধ্যাপক নরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আলাউদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. ফিল গবেষক মোহাম্মদ এহসানুল কবির, শিক্ষিকা সঞ্চু মজুমদার, শুভ্রা চৌধুরী, লুত্ফুন্নেছা বেগত, শিরিন আখতার হেনা ও মমতাজ শফী, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটি চট্টগ্রাম শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্য মোহম্মদ হোসেন খান, বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা এডভোকেট ভুলন লাল ভৌমিক ও এডভোকেট আমীর আব্বাস, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ সালেহ উদ্দীন হায়দার সিদ্দিকী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এডভোকেট বিশ্বময় দেব, মুক্তিযোদ্ধা শব্দ সৈনিক লেখক ও ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাবেক সভাপতি বেগম মুশতারী শফী, অবসরপ্রাপ্ত শিক ও লেখক ফেরদৌস আরা আলিম, অভিনেতা দেবাংসু হোর, নাট্যকর্মী রিদোয়ান ফরহাদ, আবদুর রফিক, আর্ট ডিরেক্টর প্রসেনজিত্ বড়ুয়া, কবি ও সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ লেখক শিবির চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি নূরুল ইসলাম হেলালী, গণসংহতি আন্দেলন চট্টগ্রাম শাখার সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিকি মজুমদার, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা এম, এম, পারভেজ লেনিন, সাংবাদিক হাফিজ রশীদ খান, আবু মুসা চৌধুরী, জাহেদুল আজাদ, আরিফ চৌধুরী ও সঞ্জয় দাশ, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, লেখক জামাল উদ্দীন, আহমদে জসিম, প্রদীপ খাস্তগীর ও ব্যবসায়ী শ্যামল দাশগুপ্ত অন্যতম।
বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ২৫ জুন ২০১১ জাতীয় সংসদে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল ২০১১ উত্থাপনের পর ৩০ জুন তড়িঘড়ি করে তা পাশ করা হয়েছে। এই বিলে বর্তমান সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে: “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।” আমরা এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিগুলোসহ সমতল অঞ্চলে বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ একটি বহু-জাতিক ও বহু-ভাষিক রাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু নাগরিক হিসেবে সবাই বাংলাদেশী৷ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী সংখ্যালঘু জাতিগুলো নিজেদের কখনোই বাঙালি বলে পরিচয় দেবে না।
বিবৃতিতে তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর পরিচিতি, অধিকার ও মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি না দেয়া, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বলবত্ রাখার মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা এবং ৩৮ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকদের সংগঠন করার অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানান।
তারা সরকারের কাছে ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন৷ দাবিগুলো হলো অবিলম্বে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর নিজ জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা পূর্বক আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রদান করতে হবে এবং পাহাড়িজনগণের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি প্রদান, সেটলারদের সমতল অঞ্চলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ উক্ত বিবৃতিতে স্বার সংগ্রহে সহযোগিতা করেন।