সংবিধানে সকল জাতির ও ভাষাভাষির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতির দাবি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম

ঢাকা: সংবিধানে সকল জাতি ও ভাষাভাষির নিজস্ব বৈশিষ্টের ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়েছে আজ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ৫-৬ জুন দুইদিন ব্যাপী জাতীয় কনভেনশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এ দাবি জানানফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটি এই কনভেনশনের আয়োজন করে

সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত কনভেনশনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটিরসভাপতি বদরুদ্দীন উমর

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কনভেনশন আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড.আকমল হোসেন, বিশিষ্ট উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)এর সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলেরসম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গ্রেটার সিলেট আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পিডিসন প্রধান, চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, জুম্ম শরনার্থী নেতা স্নেহ ত্রিপুরা এবং উর্দুভাষী ইয়ুথ পিপলস রিহেবিলিটেশন ফ্রন্ট এর সভাপতি মোহাম্মদ সাদাকাত খান৷ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হাসিবুর রহমান

সভাপতির ভাষণে বদরুদ্দীন উমর বলেন, আজকের কনভেনশনে যাঁরা এসেছেন তাঁদের অস্তিত্ব বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত নয় ১৯৭২ সালে যাঁরা সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিকদের বাঙালী পরিচয় দিয়ে এখানে যে অন্য জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব রয়েছে তা অস্বীকার করেছিলেনযাঁরা এধরনের সংবিধান রচনা করেছিলেন তাঁদের মত জাতিবিদ্বেষী আর কোথাও নেই

পাকিস্তান আমলে ৭০সালের নির্বাচনের মাধ্যমে যেসকল প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁদের দিয়ে ৭২সালের সংবিধান অনুমোদন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে নতুনভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে এ সংবিধান অনুমোদন হয়নিতাই এক অর্থে ৭২ সালের সংবিধানই অবৈধ তাই পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে লাফালাফি তা ইডিয়টিক ছাড়া আর কিছুই নয়

তিনি বলেন,আমেরিকা আমাদের শেখাচ্ছে বাংলাদেশ হচ্ছে মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র কথায় কথায় জঙ্গী -জেহাদ শব্দগুলো আমরা আঁওড়াচ্ছি বহুজাতির দেশ বাংলাদেশকে এভাবে চিত্রিত করে মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ বলে সমগ্র সংগ্রামকেই আমেরিকা সম্রাজ্যবাদ বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে

বদরুদ্দীন উমর বলেন, আজকাল নেচে-গেয়ে দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন করে, সাম্রাজ্যবাদের অর্থে প্রোগ্রাম করে আদিবাসী নাম দিয়ে যা করা হচ্ছে তা সমগ্র জনগণের সংগ্রামী চেতনাকে ভোঁতা করার প্রচেষ্টা মাত্রতিনি জাতিসত্ত্বাসমূহের সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে তাদের নিজস্ব অধিকার বিষয়ে সচেতন হতে আহ্বান জানান যাঁরা শোষিত হচ্ছে তাঁদেরকেলড়াইয়ে এগিয়ে আসতে হবে শুধু চেতনা নয় সংগঠনও গড়ে তুলতে হবে

অধ্যাপক আকমল হোসেন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাঙালী জাত্যাভিমান এবং ধর্মীয়ভাবে মুসলিম জাতীয়তাবাদ পরিচয়ের চেষ্টার কারণে বাংলাদেশে অন্য জাতিসত্ত্বার অধিকার চাপা পড়ে গেছে তিনি বলেন, এত সংগঠন থাকতে কেন নতুন সংগঠন? এতদিন আমরা দেখছি যে জাতি নিপীড়িত হয় শুধমাত্র সে জাতিই প্রতিবাদ করে সকল নিপীড়িত জাতির প্ল্যাটফরম গঠন করে সংগ্রামকে শক্তিশালী করাই হচ্ছে এ কনভেনশনের উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে ব্যাপকমাত্রায় প্রতিবাদ করা যাবে তিনি আরো বলেন, অনিমেষ চাকমাসহ যারা শহীদ হয়েছেন তারা শুধু সে জাতিসত্ত্বার বীর নন, তারা সমগ্র দেশের প্রতিবাদী কন্ঠও।

ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা বলেন, প্রত্যেক ক্ষুদ্র এবং বৃহত্‍ জাতিসত্ত্বাসমূহের মধ্যে সুবিধাভোগী উচ্ছিষ্টভোগী থাকে, যারা প্রকৃত লড়াই না করে ক্ষমতাভোগীদের ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকে যারা প্রকৃতভাবে জাতিসত্ত্বার মুক্তি চায় তাদেরকে এসকল বাধা মোকাবেলা করতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামেও সন্তু লারমা আন্দোলন সংগ্রাম বিকিয়ে দিয়ে আর জনগণের প্রকৃত সংগ্রাম যাতেগড়ে না ওঠে তার জন্য এখন যারা সংগ্রামী তাদের হত্যার কর্মসূচি নিয়েছেন এ পর্যন্ত আমাদের পার্টির দুই শতাধিক নেতা- কর্মি নিহত হয়েছেন শহীদ অনিমেষ তার শেষ সংযোজন আর এই হত্যাকারীদের সাথে একাত্ব হয়ে বাংলাদেশের কতিপয় বামপন্থী ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতকে উসকে দিচ্ছেন

তিনি বলেন , ইউপিডিএফ-ই প্রকৃত সংগ্রাম করে যাচ্ছে শুধুমাত্র সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, সেমিনার , টকশো করে যারা লড়াইকে শৌখিন মধ্যবিত্তের কার্যকলাপে সীমাবদ্ধ করতে চায় ইউপিডিএফ তা সমর্থন করে না

তিনি আরও বলেন, ইউপিডিএফ সকল ধরনের লড়াই সংগ্রামে জনগণের পাশে রয়েছে তেল-গ্যাস রক্ষার সংগ্রাম, রুপগঞ্জ, কানসার্টের জনগণের ন্যায্য সংগ্রামেও ইউপিডিএফ সক্রিয় সমর্থন যুগিয়েছে তাই বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহের ন্যায্য সংগ্রামেও ইউপিডিএফ পাশে থাকবে তবে অক্টোপাসরুপী উচ্ছিষ্টভোগীদের বিষয়েও সদা সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, আজ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যখন জনগণ শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করছে তখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতিসত্ত্বাসমূহের এই কনভেনশন তাত্‍পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবেভারত ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার বর্তমান সরকারউলফা নেতাদের ধরে ধরে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চায় না জাতিসত্তার মুক্তির আন্দোলন গড়ে উঠুক ৷

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান, রাষ্ট্র ও মেহনতি মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শ্রমিক কৃষক মেহনতি জনগণ ও নিপীড়িত জাতিসত্ত্বাকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে

খাসী জনগোষ্ঠীর নেতা পিডিসন প্রধান বলেন, সিলেটে আমরা নিজেদের উদ্যোগে সংগঠন গড়ে তুলছিবিভিন্ন এনজিও ফিলিপাইনের ম্যানিলায় গিয়ে সামাজিক বনায়ন সম্পর্কে ওকালতি করলে আমাদের প্রতিনিধি সেখানে গিয়ে তার প্রতিবাদ করে এবং প্রজেক্টটি বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়

বিশিষ্ট উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশে উর্দুভাষী ৭/৮ লাখ রয়েছে, তাদের নাগরিক স্বীকৃতি নেই একদিন আমাদের ঘর-বাড়ী, দোকান, স্কুল সব ছিলো৷ এখন কিছুই নেই ৷ এ কনভেনশন উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতির লড়াইয়ে সমর্থন জানাচ্ছে এটা আমাদের জন্য প্রেরণার

চা-বাগানে কর্মরত বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধির নেতা পরিমল সিং বাড়াইক বলেন, আমাদের বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এনজিও ব্যবহার করছে তাদের প্রোগ্রামে এসে আমরা নেচেছি, গেয়েছি কিন্তু মুক্তির প্ল্যাটফরম পাইনি এই কনভেনশন মুক্তির সত্যিকার প্ল্যাটফরম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন

কনভেনশনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদান করেন ৷ সন্ধ্যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়

আগামীকাল ৬ জুন সকাল সাড়ে নটায় কনভেনশনের তৃতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবেঅধিবেশন শেষে কনভেনশনে অংশ গ্রহণকারী বিভিন্ন জাতিরপ্রতিনিধিদের একটি র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More