সংশোধনীর পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন এখনো অগণতান্ত্রিক : ইউপিডিএফ

0

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা আজ ১৩ আগস্ট শনিবার সংবাদপত্রে দেয়া এক বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধনকল্পে সরকারের জারিকৃত অধ্যাদেশের সমালোচনা করে বলেছেন, এতে মৌলিক ও উল্লেখযোগ্য কোন সংশোধনী আনা হয়নি, বরং মূল আইনের অগণতান্ত্রিক চরিত্রই অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা সমাধানে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবকেই নগ্নভাবে প্রতিফলিত করে।

Bibrityউক্ত আইনের ৭(৫) ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের মূল আইনে বলা হয় “চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।” ব্যাপক প্রতিবাদ, সমালোচনা ও আন্দোলনের পর সরকার ২০১২ সালে উক্ত ধারাটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সংশোধন করে উল্লেখ করে “চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।” এর চার বছর পর অধ্যাদেশ আকারে জারি করা নতুন সংশোধনীতে কেবল “সংখ্যাগরিষ্ঠ” শব্দের আগে “উপস্থিত” শব্দ যোগ করা হয়েছে মাত্র। ফলে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে চেয়ারম্যানের সম্মতি বাধ্যতামূলক করার কারণে আইনটি আগের মতোই অগণতান্ত্রিক থেকে যাচ্ছে। এতে কমিশনে এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম দেবে এবং বাস্তব কার্যক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি করবে। আর এ ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে তা নিরসনের পন্থা বা ম্যাকানিজম কী হবে ভূমি কমিশন আইনে কোথাও তার উল্লেখ নেই। এক কথায় কমিশন আইনের ৭(৫) ধারা সংশোধনের পরও এর ইতিবাচক অগ্রগতির সম্ভাবনা ক্ষীণ।’

ইউপিডিএফ নেতা আরো বলেন, ‘কমিশনের কার্যাকলী ও ক্ষমতা সংক্রান্ত উক্ত আইনের ধারা ৬ উপধারা (১) এর দফা (ক) সংশোধন করে বলা হয়েছে “পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং অবৈধ ভূমি বন্দোবস্ত ও বেদখল হওয়া ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা।” অধ্যাদেশ জারী করে সংশোধনের পরও এই উপধারাটি এখনো অত্যন্ত অস্পষ্ট থেকে গেছে। “পুনর্বাসিত শরণার্থীরা” ছাড়া আরও যে সব পাহাড়ি জমি হারিয়েছেন বা যে সব পাহাড়ির ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে তারাও এই উপধারার অন্তর্ভুক্ত হবেন কিনা তা সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয়নি। তাছাড়া “প্রচলিত আইনের” ব্যাখ্যা ২(ছ) ধারায় দেয়া হলেও “রীতি ও পদ্ধতির” ব্যাখ্যা কমিশন আইনের কোথাও দেয়া হয়নি। অধ্যাদেশেও এ সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ফলে আইনটির বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।’

প্রসিত খীসা অভিযোগ করে বলেন, ‘১ আগস্ট সরকারের মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর গত ৯ আগস্ট জারী করা উক্ত অধ্যাদেশে ১৪টি সংশোধনী আনা হলেও দু’ একটি বাদে অধিকাংশ সংশোধনী অগুরুত্বপূর্ণ ও ছোটখাট বিষয় সম্পর্কিত এবং এতে সংশোধনী বিষয়ে ইউপিডিএফের প্রস্তাব ও জনগণের দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।’

ইউপিডিএফ নেতা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের স্বার্থে সংবিধানে প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি প্রদান, ভূমি কমিশন আইনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি’র যথাযথ ব্যাখ্যা, ৭(৫) ধারাকে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক করা এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির শুনানিতে হেডম্যান ও কার্বারীদের লিখিত মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।
————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More