সরকার ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে

0
সমাবেশে বক্তব্য রাখেছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা

ঢাকা ।। সরকার ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। যারা সরকারের সমালোচনা করছে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদেরকে আটক করে নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদ’র কারাবন্দিত্বের নয় মাস পূর্তির দিনে ছাত্র-শিক্ষক-জনতার ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের সভাপতি সৈকত আরিফের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্রচিন্তা’র সদস্য এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারানির্যাতিত দিদারুল ভূঁইয়া, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, শ্রমিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারানির্যাতিত ইমতিয়াজ আহমেদ।

পিসিপি নেতা অমল ত্রিপুরা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন সংসদে পাশ হচ্ছিল তখন সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ দেশের জনগণ এর বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু সরকার জনগণের মতকে উপেক্ষা করে আইনটি পাশ করেছে। বর্তমানে সরকার এই আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে যারা সরকারেরের সমালোচনা করছে, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদেরকে আটক করে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ২০১৬ সালে ইউপিডিএফ অন্যতম সংগঠক শহীদ মিঠুন চাকমাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, সরকার এদেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে অপহরণ করে গুম করা হয়েছে। তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা পেতে কয়েকটি থানায় গেলেও পুলিশের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাইল্যাঘনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করেছিল তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা লেঃ ফেরদৌস গংরা। অপহরণের দীর্ঘ ২৫ বছরেও আমরা তার কোন হদিস পাইনি। সরকার এই অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠূ তদন্ত ও বিচার করেনি।

তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, আটককৃত কিশোর-মুশতাক’র মুক্তিসহ অবিলম্বে মাইকেল চাকমা ও কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান।

সমাবেশে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ভিন্নমত এবং বিরোধী দলের মানুষের ওপর দমনপীড়ন করার জন্য এই আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। সরকার এই আইনের ধারাগুলো অপপ্রয়োগ করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি সম্প্রতি আলজাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পুরোপুরি মিথ্যা নয় দাবি করে সরকারের কাছে অভিযোগগুলোর যথাযথ্য ব্যাখ্যা দাবি করেন। তিনি বলেন, ‌‘সরকার যদি প্রমাণ করতে পারে এই প্রতিবেদনটি পুরোপুরি মিথ্যা তাহলে স্বেচ্ছায় ফাঁসিবরণ করব’।

রাষ্ট্রচিন্তা’র সদস্য রাখাল রাহা বলেন, ৫৭ ধারাকে নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি এই শাহবাগে। তার ফলাফল হিসেবে আমরা পেলাম এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটা দিয়ে আরো বেশি জুলুম করা সম্ভব। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমুলক আইনের কারণে আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো আলজাজিরার প্রতিবেদন যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে সেসব নিয়ে বলার সাহস রাখে না।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে এই আইনে আটক কিশোর, মুশতাক সহ সকল বন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ৫ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরকার বিরোধী পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে রাজধানীর কাকরাইল থেকে ও লেখক মুশতাক আহমেদকে লালমাটিয়া থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। তাদেরকে এখনো কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More