সাজেকে অনুষ্ঠিত গণ সম্মেলনে উজো বাজার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বানচাল করার প্রস্তাবনা গ্রহণ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Sajekসাজেক: রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নে স্থাপিত উজো বাজারটি রক্ষার্থে গত ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সাজেকে অনুষ্ঠিত গণ সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে উজো বাজার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বানচাল করার তিন দফা প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে। এগুলো হলো- ১.উজোবাজার ধ্বংসের যে কোন ষড়যন্ত্র বানচাল করা হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক গ্রাম থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ‘‘উজো বাজার রক্ষা কমিটি’’ গঠন করা হবে, ২. দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাঘাইহাট বাজার বয়কট অব্যাহত থাকবে। যারা এই গণবয়কট ভেঙে দিয়ে বাজারটি চালু করার ষড়যন্ত্র করবে বা চেষ্টা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে ও ৩.উজো বাজার উন্নয়নের জন্য সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ইউপিডিএফ নেতা শান্তিদেব চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, উজো বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জ্যোতিলাল কার্বারী, ডানে বাইবা ছড়া গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী বিমল কান্তি চাকমা, নোয়াপাড়া গ্রামের কার্বারী চিত্ত রঞ্জন চাকমা, মাচলং বাজার কমিটির সভাপতি অমর শান্তি চাকমা, সাজেক ইউনিয়নের প্রাক্তন মেম্বার নয়ন রঞ্জন চাকমা, ইউপিডিএফ নেতা দেবদন্ত ত্রিপুরা ও জুয়েল চাকমা প্রমুখ।

সম্মেলনে প্রস্তাবনা পাঠ করেন ইউপিডিএফের সাজেক ইউনিটের প্রধান সংগঠক মিঠুন চাকমা। এতে উপস্থিত লোকজন হাত উচিয়ে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবনাটি পাশ করেন।

সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, বহু সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সাজেকের উজো বাজার ধ্বংসের জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। গণসংগ্রামের সাফল্যের মূর্ত প্রতীক এই উজো বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে সাজেকে দ্বিতীয়বার সেটলার হামলার পর। সেই পর থেকে এই বাজারকে ধ্বংস করার জন্য সরকার ও সেনাবাহিনী বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

এতে বলা হয়, উজো বাজার প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সাজেকের জনগণের ভূমি বেদখল বিরোধী বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম। ২০০৮ সালে দেশে জরুরী অবস্থা জারীর সময় সাজেকে প্রথম পাহাড়ি উচ্ছেদ, ভূমি বেদখল ও বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়। সেই বছর ২০ এপ্রিল সেনাবাহিনী ও সেটলারদের যৌথ হামলায় ৪টি গ্রামের ৭৭টি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। ৯ আগষ্ট গঙ্গারাম দোরের ৪টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। ১৯ আগষ্ট সেটলারদের হামলায় রেতকাবা গ্রামের লাদুমনি চাকমা নিহত হন। এরপর ২০১০ সালের ১৯-২০ ফেব্রুয়ারী সেনাবাহিনী ও সেটলারদের যৌথ হামলায় ২টি বৌদ্ধ বিহার ও ১টি গীর্জাসহ ১১টি গ্রামের ৫ শতাধিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এই বর্বরোচিত হামলায় বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষী বিজয় চাকমা প্রাণ হারান।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, সেনাবাহিনী ও বাঙালি সেটলারদের হামলা ও ভূমি বেদখল প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমরা সাজেকের জনগণ ইউপিডিএফের নেতৃত্বে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হই। সেনাবাহিনী ও সেটলারদের ভূমি বেদখল প্রচেষ্টা বানচাল হয় এবং বাঙালি সেটলারদের বিপুল অংশ সাজেক থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা বাঘাইহাট বাজার বয়কট ও গঙ্গারাম দোরে উজো বাজার স্থাপন করি। সেনাবাহিনী শুরু থেকে উজো বাজার ধ্বংসের চেষ্টা চালালেও আমরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। সেনারা সে সময় ভয়ভীতি, হুমকি ইত্যাদি কৌশলের পাশাপাশি পাহাড়িদের একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে ব্যবহার করে বাঘাইহাট বাজার বয়কট ভাঙতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা সাজেকের জনগণ তাও সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেছি।

পাহাড়িদের ওই স্বার্থবাদী মহলটি আবার মীরজাফর-বিভীষণের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, সেনাবাহিনী ও বাঙালিদের বিভিন্ন প্রলোভনে মুগ্ধ হয়ে তারা জনগণের বাঘাইহাট বাজার বয়কট ভেঙে দেয়ার ও উজো বাজার ধ্বংস করে দেয়ার কন্ট্রাক্টরী কাজ হাতে নিয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা সাজেকের জনগণের তথা জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিতে কার্পন্য করছে না।

প্রস্তাবনায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাঘাইহাট বাজার খুলে দেয়া হলে একদিকে উজো বাজার ধ্বংস হবে এবং অন্যদিকে সাজেক এলাকায় আবার বাঙালি সেটলারদের আগমন ঘটবে। আর তখন আবার ভূমি বেদখল ও সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হবে।

সাজেকের বীর জনগণ কিছুতেই উজো বাজার ধ্বংস হতে দেবে না বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।

—————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More