সাজেকে জাতীয় ডাক পত্রিকা রাখার অপরাধে সেনাবাহিনী কর্তৃক দুই ব্যক্তি আটক!
আটককৃতরা হলেন শাসনাশ্রী চাকমা ওরফে রিপন চাকমা (৩০) ও নিপুন চন্দ্র চাকমা (২৬)। এর মধ্যে রিপন চাকমার পিতার নাম সবিনয় চাকমা। তার বাড়ি রাঙামাটির ধনপাদায় হলেও বর্তমানে তিনি নাঙলমারায় তার শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর নিপুন চন্দ্র চাকমা সাজেকের শিজক ছড়া ব্রিজ পাড়ার নগেন্দ্র সেন চাকমার ছেলে।আটকের পর তাদেরকে বাঘাইছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গঙ্গারাম এলাকা থেকে নিপুন চন্দ্র চাকমাকে যাত্রী নিয়ে রিপন চাকমা মোটর সাইকেল যোগে হাজাছড়া এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি সাথে করে ঐ এলাকার জন্য কিছু জাতীয় ডাক পত্রিকাও নেন। যাবার পথে বাঘাইহাট জোনের ৬নং চেকপোষ্টে পৌছলে সেনারা তাদের দু’জনকে আটক করে জোনে নিয়ে যায়।
তাদের আটকের খবর পেয়ে সাজেক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার বিনয় চাকমা জোনে খবর নিতে যান। এ সময় সেনারা তাকে (মেম্বারকে) বলেন, ‘এ পত্রিকায় আমাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা লেখা রয়েছে। তাই এটি অবৈধ। তারা এ পত্রিকাটি কোথায় এবং কিভাবে পেয়েছে তা আমাদের তালাশ করতে হবে।’
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) বাঘাইছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক সমশান্তি চাকমা এক বিবৃতিতে এ আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ আটকের ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সংবিধানের মৌলিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাচারীতার একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত মন্তব্য করে ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ‘সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে তাদের আটক করা হয়েছে। যে পত্রিকাটি রাখার দায়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেটা অনিবন্ধিত হলেও নিষিদ্ধ নয় এবং উক্ত পত্রিকায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি কথাও লেখা নেই।’
তিনি অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘যে সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে বলে দাবি করা হয়, সে সেনাবাহিনীকে নিজ দেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট বাঘাইহাট জোনের এ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন ইয়াছির আরাফাত সাজেকের নোয়াপাড়া গ্রামের কার্বারী চিত্তরঞ্জন চাকমাকে ডেকে বৌদ্ধ বিহারে মাইকে শীলা (ধর্মীয় শ্লোক) দেয়া যাবে না বলে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে বিহারে (নোয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহার) ভোররাতে মাইকে শীলা দেয়া বন্ধ করতে হবে। মাইকে শীলা দিলে আমাদের ডিস্টার্ব হয়। যদি শীলা দিতে হয় তাহলে আযানের পর দিতে হবে।’ এ সময় সেখানে জোনের টুআইসি মেজর ফিরোজও উপস্থিত ছিলেন। এর পর এ খবরটি তৎক্ষণাৎ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে এবং জাতীয় ডাকের চলতি সংখ্যায়ও প্রকাশিত হয়।
উক্ত দুই ব্যক্তিকে আটকের পর সেনারা চিত্ত রঞ্জন কার্বারীকেও জোনে ডেকে পাঠান। সেনারা জাতীয় ডাকে প্রকাশিত রিপোর্টের উক্ত কথাগুলো কাকে কাকে বলেছেন জানতে চান। চিত্তরঞ্জন চাকমা সেদিন জোন থেকে বের হয়ে পাহাড়ি-বাঙালি অনেক জনকে এবং বিহারের ভান্তেকে বলেছেন বলে অকপটে স্বীকার করলে সেনারা তাকে আর কোন কিছুই বলার সুযোগ পায়নি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও আটককৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে এলাকাবাসী আজ বিকালে সাজেকের উজো বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। মিছিলটি উজো বাজার থেকে শুরু হয়ে লাদুমনি বাজার ঘুরে আবার উজো বাজারে এসে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এতে বক্তব্য রাখেন সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা, মেম্বার জ্যোৎস্না রাণী চাকমা, জ্ঞানেন্দু চাকমা, জ্যোতিলাল কার্বারী প্রমুখ।
বক্তারা সেনাবাহিনী কর্তৃক এ আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিাবদ জানান। তারা অবিলম্বে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।