সাজেক ও খাগড়াছড়িতে সেটলার হামলায় নিহতদের স্মরণে হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারী খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পাহাড়িদের গ্রামে সেটলার হামলার ১ম বার্ষিকী৷ গত বছর এই দিনে সেটলার বাঙালিরা খাগড়াছড়ি সদরে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। এর আগে ১৯-২০ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি জেলার সাজেকে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এবং সেনাবাহিনী গুলি করে দু‘জন পাহাড়িকে হত্যা করে।
সাজেক ও খাগড়াছড়িতে সেনা-সেটলার হামলার ১ম বার্ষিকী উপলহামলায় নিহত-আহতদের স্মরণে আজ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের য়ংড বৌদ্ধ বিহার, শিবলী বৌদ্ধ বিহার, উপালি বৌদ্ধ বিহার, দশবল বৌদ্ধ বিহার এবং ধর্মপুর বনবিহারে হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়৷ এছাড়ামহালছড়ি উপজেলার দূরপুয্যানালা জ্ঞানোদয় বনবিহার, লেমুছড়ি ত্রিরত্ন বৌদ্ধ বিহার, বদানালা সাধনা বৌদ্ধবিহার ও মাইসছড়ি বৌদ্ধ শিশুঘর বিহার সহ পানছড়ি, দিঘীনালা সহ অন্যান্য উপজেলায়ও বিভিন্ন বিহারে হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলার রত্নাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহার, শনখোলা পাড়া বিনয় রত্ন বৌদ্ধ বিহার, বড়পুল পাড়া শাক্যমনি বৌদ্ধ বিহার, দণি মরাচেঙ্গী মৈত্রী বৌদ্ধ বিহার, গর্জনতলী শাক্যমনি বৌদ্ধ বিহার, জঘনাতলী চিত্তানন্দ বৌদ্ধ বিহার, বন্দুকভাঙার ভারবোচুগ বন বিহার ও লিক্যাংছড়া বৌদ্ধ বিহার সহ বিভিন্ন উপজেলায় বিহারে বিহারে হাজার বাতি প্রজ্জ্বল করা হয়।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক কালোপ্রিয় চাকমা এক বিবৃতিতে সাজেক ও খাগড়াছড়ি সামপ্রদায়িক হামলার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়ি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে খুবই সুপরিকল্পিতভাবে সেদিন হামলা চালানো হয়েছিল। আজও সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী একইভাবে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলায় পাহাড়িদের তিনটি গ্রামে হামলা, অগি্নসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়েছে৷ এছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি জেলার কুদুকছড়িতে এবং ২১ ফেব্রুয়ারী কাউখালীতে পাহাড়িদের উপর হামলা চালানো হয়েছে এবং ইউপিডিএফ-এর অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ঘটনার এক বছর পরও হামলাকারী প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে কোন পদপে সরকার তথা প্রশাসন গ্রহণ করেনি৷ বরং হামলাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে৷ ভবিষ্যতে যাতে অধিকার আদায়ের আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে সে লক্ষে সরকার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে৷ মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত স্বৈরশাসন জারি রাখা হয়েছে৷
বিবৃতিতে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শাসকগোষ্ঠির কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠিটি পার্বত্য চট্টগ্রামে আবারো অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে৷ পাহাড়িদের উত্সব ঘনিয়ে এলেই এ গোষ্ঠিটির তত্পরতা বেড়ে যায়৷ এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে মিছিল-মিটিঙ ও সভা-সমাবেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকার তথা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।