সাধক মহাপুরুষ বনভান্তের দ্বিতীয় মহাপ্রয়াণ বার্ষিকী আজ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
Bonovante
রাঙামাটি: আজ ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম শীর্ষ ধর্মীয় গুরু রাঙামাটির রাজ বনবিহারের অধ্যক্ষ সাধক মহাপুরুষ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের দ্বিতীয় মহাপ্রয়াণ বার্ষিকী।

এ উপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহারে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৩ বছর বয়সে বনভান্তের মহাপ্রয়াণ ঘটে।বর্তমানে তার মরদেহটি রাঙামাট রাজবন বিহারে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশেষ কফিনে পেটিকাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

বনভান্তের দ্বিতীয় মহাপ্রয়াণ বার্ষিকী উপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহারে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকালে পঞ্চশীল গ্রহণ, অষ্টপরিষ্কার দান, দুপুরে বনভান্তের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও স্মরণ সভা ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে।

উল্লেখ্য, মহান বৌদ্ধ সাধক বনভান্তে ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারী রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের মুরোঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল রথীন্দ্র চাকমা। তার বাবার নাম হারু মোহন চাকমা এবং মাতার নাম বীরপুদি চাকমা।

বনভান্তে ১৯৪৯ সালে ২৯ বছর বয়সে চট্টগ্রামের নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন। সেখানে কিছু সময় ধ্যান সাধনার পদ্ধতি শেখার পর তিনি রাঙামাটির ধনপাদার গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি মছা-মাছির উপদ্রব সহ্য করে, বাঘ ভালুক, সাপ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীর ভয় উপো করে, রোদ-শীত-ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একাকী বেশ কয়েক বছর কঠোর তপশ্চ্যাচরণ করেন। পরে কাপ্তাই বাঁধের পানিতে উক্ত জনপদ পানিতে তলিয়ে গেলে এক উপাসক তাকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। সেখানেও তিনি লোকালয় থেকে দূরে গহীন বনে তার ধ্যান সাধনা অব্যাহত রাখেন। এখানে থাকার সময়ই তিনি বনভান্তে নামে পরিচিতি পান।

১৯৭১ সালে কিছু উপাসক তাকে লংগুদু আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে তিনি রাঙামাটিতে রাজবন বিহারে চলে আসেন। চাকমা রাজমাতা বিনীতা রায় ও ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ করে সেখানে নিয়ে যান এবং কয়েক শত একর জমি দান করে রাজ বন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বুদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণে ও প্রচার-প্রসারে মহান সাধক বনভান্তের অবদান অপরিসীম। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে গৌতম বুদ্ধ সময়ের পুণ্যাশীলা বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত নিয়মে কঠিন চীবর দানোৎসব চালু করেন। সেই পর থেকে প্রতি বছর রাজ বনবিহারে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

বনভান্তে কঠোর ধ্যানের মাধ্যমে নির্বাণ সাত করে অর্হত্ত্ব লাভ করেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়া তিনি ঋদ্ধি শক্তির অধিকারী বলেও মনে করা হয়। তার মতো অর্হৎদের আবির্ভাব পৃথিবীতে দুর্লভ। তিনি আজীবন গৌতম বুদ্ধের অহিংসা, মৈত্রী ও করুণার বাণী প্রচার করে গেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরকে সদ্ধর্মে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি বিরাট অবদান রেখেছেন। এজন্য তিনি অনাগত শত শত হাজার হাজার বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন এবং বুদ্ধনীতি পালনে ও নির্বাণ লাভেচ্ছুদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More