সুবলঙে ইউপিডিএফ নেতা অনিমেষ চাকমাসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার, ১ জন এখনো নিখোঁজ : প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত, সড়ক অবরোধ সহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটি : রাঙামাটি জেলার সুবলঙে গতকাল ২১ মে, শনিবার, সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় নিহত ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমাসহ এ পর্যন্ত ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইউপিডিএফ সদস্য পুলক চাকমা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
আজ ২২ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ১৫০-২০০ গজ দূরে পানিতে ভাসমান অবস্থা থেকে অনিমেষ চাকমার লাশ উদ্ধার করা হয়৷ লাশটি পানিতে ভাসতে দেখে স্থানীয় জনসাধারণ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে৷ অনিমেষ চাকমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিরচিহ্ন রয়েছে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘটনাস্থলের ১০০ গজ দূরে পানির নীচ থেকে পূর্ণভূষণ চাকমা ওরফে নবদ্বীপ ও দুপুরের দিকে শুক্রসেন চাকমা ওরফে প্রবীন-এর লাশ উদ্ধার করা হয়৷ তাদের উভয়ের শরীরেও গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন রয়েছে।
লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিহতদের পরিচিতি :
১৷ শুক্রসেন চাকমা (প্রবীন) বয়স : ৩৬ পিতা : চিত্র কুমার চাকমা, গ্রাম : ধামাইছড়া, জুরাছড়ি।
২৷ অনিমেষ চাকমা (৪৫) পিতা : অনন্ত বিকাশ চাকমা, গ্রাম- বাবুছড়া, দিঘীনালা, খাগড়াছড়ি, কেন্দ্রীয় সদস্য ইউপিডিএফ।
৩৷ পূর্ণভূষণ চাকমা (নবদ্বীপ) বয়স : ৪৮, পিতা : মৃত. ঘৃত মোহন চাকমা, গ্রাম : কুদুকছড়ি, রাঙামাটি৷
৪৷ পুলক চাকমা (ফিবেক), বয়স : ৩২, পিতা : লী কুমার চাকমা, গ্রাম : উকছড়ি, সুবলঙ, রাঙামাটি।
প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত
সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃকই ইউপিডিএফ-এর কেন্দ্রীয় নেতা অনিমেষ চাকমা সহ ৪ নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে আজ ২২ মে রবিবার, সকাল ১১টায় রাঙামাটির সুবলঙে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফ। মিছিলটি সুবলঙ বাজার প্রদণি করে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর সুবলঙ ইউনিটের সংগঠনক বিকল্প চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জুরাছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রীতি বিকাশ চাকমা ও সদস্য পরেশ তালুকদার, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জুরাছড়ি থানা শাখার সভাপতি প্রমোদ চাকমা ও সহ সভাপতি হেমন্ত চাকমা, নাড়াইছড়ি গ্রামের কার্বারী রণজিত্ চাকমা ও মিদিঙাছড়ি গ্রামের কার্বারী অরুণ চাকমা।
বক্তারা ইউপিডিএফ-এর ৪ নেতা-কর্মীকে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই নির্মম ও বর্বর হত্যাকান্ডের জন্য সন্তু লারমাই দায়ী। তার নির্দেশেই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি করে ইউপিডিএফ্-এর নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে।
বক্তারা অবিলম্বে খুনীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও খুনী সন্তু লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অপসারণ ও বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে বাঘাইছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। দুপুর সাড়ে ১২ টায় বাঘাইছড়ির বাবু পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে উপজেলা চত্বর ঘুরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি চিক্কেধন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি অতল চাকমা বক্তব্য রাখেন। তারা অবিলম্বে খুনী সন্তু লারমা সহ তার পোষ্য সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতেওবিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বিকাল ৩টায় মিছিলটি বাবু পাড়া থেকে শুরু হয়ে মহালছড়ি বাজারে যেতে চাইলে তেলের পাম্পের কাছে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে সেখান থেকে মিছিলটি আবারো বাবু পাড়ায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মহালছড়ি থানা শাখার সভাপতি সর্বানন্দ চাকমা বক্তব্য রাখেন।
আরো কর্মসূচী:
আগামীকাল ২৩ মে সোমবার পূর্ণদিবস সড়ক ও নৌপথ অবরোধ ছাড়াও আরো কিছু নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো ২৩ মে থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত প্রত্যেক পার্টি অফিসে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা, ২৩ মে থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ প্রত্যেক পার্টি সদস্য কর্তৃক নিরামিষ পালন, ২৪ মে শোক মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ, ২৫ মে স্মরণ সভা ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং ২৯ মে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।