ভোরের কাগজের সম্পাদকীয়

সুষ্ঠু তদন্তে রমেল মৃত্যুসহস্য উম্মোচিত হোক

0
4_r1_c1সেনাবহিনীর হাতে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা রমেল চাকমার মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আটকের পর তার উপর নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এরই ফলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া মৃত্যুর পর রমেলের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যেতে না দিয়ে চুপিসারে পুড়িয়ে ফেলা, এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশে সাংবাদিকদের বাধাদানের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ ও তদন্তের দাবি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন। মানবাধিকার কমিশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনার অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করছি।
4_r2_c1
রমেল চাকমা ইউপিডিএফ সমর্থিত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নানিয়ারচর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ৫ এ্রপ্রিল জেলার নানিয়ারচর উপজেলা সদর থেকে তাকে আটক করে সেনাবাহিনী। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ১৯ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। রমেলের সহকর্মী ও স্বজনদের অভিযোগ হলো, সেনাহেফাজতে রমেলকে অমানুষিক নির্যাতনের পর থানায় হস্তান্তর করতে চাইলে ওসি তাকে গ্রহণ করেনি। তারপর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইলে তারাও তাকে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করে। পর মুমুর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে তাকে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসা দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমেলের মুত্যু হয়। আটকাবস্থায় রমেল চাকমার ওপর নির্যাতন ও পরবর্তীতে মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সেনা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় অস্বীকার করে একে অন্যের উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর দাবি অনুয়ায়ী, যদি তারা রমেল চাকমার মৃত্যুর জন্য দায়ী না হয়, তাহলে স্বভাতই প্রশ্ন আসে- কেন ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কেন মৃতদেহটি বাড়িতে নিয়ে যেতে না দিয়ে তা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে? কেন এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার না করার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া হচ্ছে? চিকিৎসা চলাকালে কেন আত্মীয়স্বজনসহ কাউকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি? কেনইবা ‍মৃতদেহটি চুপিসারে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে? রমেল চাকমা যদি কোন মামলার ‘আসামী’ হয়ে থাকেন তাহলে তো গ্রেফতার করে তাকে থানায় নেয়ার কথা, কিন্তু সেটা না করে জোনে নেয়া কেন সেটাও প্রশ্ন?
 

এদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। রমেলের মৃত্যুরহস্য তদন্ত সাপেক্ষ তবে নির্মম শারীরিক নির্যাতন তার মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ এই আশঙ্কা পরিস্থিতি বিচারে অমূলক নয়। নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে পাহাড়ি ছাত্র নেতার মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে তা গুরুতর। সেনাবাহিনীর দাবি অনুয়ায়ী যদি তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ সত্য না হয়, তাহলে রমেলের মৃত্যু কি করাণে ঘটল, পুলিশ দায়ী কিনা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন অবহেলা ছিল কিনা এবং সে কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল কিনা তাও স্পষ্ট হওয়া দরকার। সেনা সদস্যদের হাতে আটকের পর একটা তরুণ তাজা প্রাণ লাশ হয়ে যাবে, যৌক্তিক কোন কারণ দর্শানো হবে না, কেউ কোন দায় নেবে না- তা তো হয় না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে রমেল চাকমার মৃত্যু রহস্য উদঘাটিত হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় তদন্তের যে দাবী উঠেছে তা খুবই যৌক্তিক। আমরা মনে করি নাগরিকদের ন্যায় বিচার পাওয়ার যে অধিকার সংবিধানে দেয়া হয়েছে, তা যে কোনভাবে সমুন্নত রাখতে হবে। এ অধিকার যেন বুটের তলায় পিষ্ট না হয় তা দেখতে হবে রাষ্ট্রকে।

সৌজন্যে: ভোরের কাগজ

__________
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More