সেনাবাহিনীর যাদুতে গ্রেফতারকৃত বিবাহিত স্ত্রী অপহৃত; স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুরী জেলে

0

রাঙামাটি।। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড অনেক সময় বাণিজ্যিক বাংলা  ফিল্মের কাহিনীকেও হার মানায়। তাদের শক্তির জোরে রচিত বাস্তব ঘটনায় বিবাহিত স্ত্রী এখন ‘অপহৃত’; স্বামী, শ্বাশুর ও শ্বাশুরী ‘অপহরণ মামলায়’ জেলে অন্তরীণ।

সেনাদের এই সিনেমার নাম হতে পারে ‘স্বামী কেন জেলে’ অথবা ‘স্ত্রী কেন শত্রু’।

জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর ২০১৮ রাত ২টার দিকে নান্যাচর জোন এবং কুদুকছড়ি ক্যাম্প থেকে একদল সেনাসদস্য নব্য মূখোশবাহিনীর তিন সন্ত্রাসীসহ ডুলুছড়ি গ্রামে গিয়ে সঞ্জীব চাকমা, তার স্ত্রী মিতালী চাকমা, বাবা প্রসন্ন কুমার চাকমা ও মা সুনন্তা চাকমাকে গ্রেফতার করে।

সিএইচটি নিউজ ডটকমে তখন এই গ্রেফতারের সংবাদ প্রকাশ করা হয়। (https://chtnews.com/wp/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%9B%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%87-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0/)

এরপর সেনারা মিতালী চাকমাকে তাদের হেফাজতে রেখে বাকি তিন জনকে অপহরণ মামলা ঝুলিয়ে দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। ভয়ডর দেখিয়ে রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় এই মামলা করা হয়।

মামলায় ইউপিডিএফ নেতা সচিব চাকমাসহ কয়েকজনকেও আসামী করা হয় বলে জানা যায়।

কিন্তু আজ শুক্রবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে খাগড়াছড়িতে মিতালী চাকমা ইউপিডিএফ-এর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শারীরিক অত্যাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন।

কারা তাকে এই তথাকথিত সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য করেছে তা ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করলেই সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

এলাকার বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি সরকারী কলেজের ছাত্রী মিতালী চাকমার সাথে ইউপিডিএফ কর্মী মিল্টন তঞ্চঙ্গ্যার গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কয়েক মাস আগে নানিয়াচরে মিল্টন তঞ্চঙ্গ্যাকে নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীরা ধরে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এখন তিনি রাঙামাটি জেলে। তার বড় ভাই ইউপিডিএফ নেতা রাহেল তঞ্চঙ্গ্যাকেও সেনারা আটক করে। তিনিও এখন জেলে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।

মিতালী চাকমা জেলে বেশ কয়েকবার তার বন্ধু মিল্টন তঞ্চঙ্গ্যার সাথে দেখা করেন এবং তাকে ছাড়ানোর জন্য এক সময় নব্য মুখোশদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়েন। তিনি মুখোশদের সাথে নানিয়াচরে দেখা করেন ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।

এ তথ্য জানতে পেরে ঘোর ইউপিডিএফ সমর্থক মিতালী চাকমার বাবা সাপছড়ি ইউপির সুবলছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ধনমুনি চাকমা নিজ আত্মীয় স্বজনের সাথে পরামর্শ করে মিতালীকে ডুলুছড়ি পাড়ার নিবাসী প্রসন্ন কুমার চাকমার ছেলে সঞ্জীব চাকমার সাথে সামাজিক রীতি অনুযায়ী বিয়ে দেন। মিতালী চাকমারও এতে সায় ছিল। এটা আনুমানিক দুই-তিন মাস আগের ঘটনা।

কিন্তু নব্য মুখোশ ও সেনারা ইউপিডিএফ-এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও তার নেতাকর্মীদের হেয় করতে ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে মিতালী চাকমাকে কৌশলে ব্যবহার করে।

তারা মিতালী চাকমাকে শারীরিক অত্যাচার ও জেলের ভয় দেখিয়ে অপহরণের নাটক সাজানোর জন্য তাকে রাজী করায় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

‘ইউপিডিএফ-এ যোগ দিতে রাজি না হওয়ায় টানা তিন মাস আস্তানায় আটকে রেখে শারিরীক অত্যাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ’ কাকপক্ষীও বিশ্বাস করবে না।

আলেয়া চাকমা নামে কুদুকছড়ির এক বাসিন্দা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘আমি আসল ঘটনা জানি। মিতালী চাকমা এত কী হয়েছেন যে ইউপিডিএফে যোগ দিতে অস্বীকার করায় ইউপিডিএফের নেতারা তাকে অত্যাচার করবেন।’

‘এটা (শারিরীক অত্যাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ) সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ তাকে এই কথা বলতে বাধ্য করেছে, সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।’

এভাবে জোর করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ও মিথ্যা-বানোয়াট মামলা সাজিয়ে নিরীহ লোকজনকে জেলে দিয়ে সেনাবাহিনী ও তাদের সৃষ্ট রাজাকাররা (নব্য মুখোশরা) চরম অন্যায় ও ঘৃন্য কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়া ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা কলঙ্ক দেয়ার চেষ্টাও অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More