সেনাবাহিনী কর্তৃক সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমার বাড়ী ঘেরাও’র নিন্দা ও প্রতিবাদ
সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ৮ গণসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড-এর নেতৃবৃন্দ আজ ৪ জুন বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে এলাকার জনগণের মাঝে বিনামূল্যে ফলজ চারা বিতরণের কারণে সেনাবাহিনী কর্তৃক সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমার বাড়ি ঘেরাও, বাড়ির প্রবেশ গেট ভেঙে দেয়া, দরজায় লাথি মেরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা এবং তাকে (নিরূপা চাকমাকে) আটকের হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে ৮ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, গতকাল ৩ জুন বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাঘাইহাট জোন কমান্ডারের নির্দেশে একদল সেনা সদস্য নিরূপা চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় সেনারা বাড়ির প্রবেশ গেট ভেঙে দেয় এবং লাথি মেরে বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে দরজা তালাবদ্ধ থাকায় সেনারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এ সময় সেনারা ইউপিডিএফের পক্ষে জনগণের মাঝে চারা বিতরণের কারণ জানতে চায় এবং দুই দিনের মধ্যে তাকে আটক করার হুমকি দেয়। উল্লেখ্য, গত ৩১ মে ইউপিডিএফ সাজেক ইউনিট কর্তৃক ১৪টি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারকে বিনামূল্যে বিভিন্ন ফলজ চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন করে বলেন, জনগণের মাঝে ফলজ চারা বিতরণ কি ধরনের অপরাধ? যেখানে ফলজ-বনজ বাগান সৃজনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে জনগণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে সেনাবাহিনীর বাধা দেয়ার উদ্দেশ্য কি? এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা ফলজ-বনজ বাগান সৃজনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হোক সরকার বা সেনাবাহিনী সেটা চায় না।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। এই সরকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জারি করা ১১টি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত সেনা শাসন পরিচালনা করছে। সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে অন্যায়ভাবে ধরপাকড়, রাত-বিরাতে বাড়ি তল্লাশি ও নানা হয়রানির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার ভুলুণ্ঠিত করে জনগণের উপর চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে চলেছে। ফলে জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিবৃতিতে আট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন, হয়রানি থেকে নারীরাও রেহাই পাচ্ছে না। তারা ভয়-ভীতি, হয়রানি ও নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে নারীদেরকে অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেনা কর্মকর্তা লেঃ ফেরদৌস কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমাকে অপহরণ এবং সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমার বাড়ি ঘেরাও ও তাকে আটকের হুমকি তা-ই প্রমাণ করে।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে নিরূপা চাকমার বাড়ি ঘেরাওয়ের সাথে জড়িত সেনা সদস্যদর শাস্তি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১টি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল, হয়রানিমূলক-অন্যায় ধরপাকড় ও সেনা তল্লাশি বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান ।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাইকেল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎস্না রাণী চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড এর জ্ঞান কীর্তি চাকমা।
আট গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির সদস্য সচিব অংগ্য মারমা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিবৃতিটি প্রদান করা হয়েছে।
———————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।