বিপুল চাকমাসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে
সেনা-বিজিবি-পুলিশের বাধা সত্ত্বেও খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র সংহতি সমাবেশ
খাগড়াছড়ি : সেনা-বিজিবি-পুলিশের বাধা সত্ত্বেও আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) খাগড়াছড়িতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর পূর্বঘোষিত সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গত ২ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত সংহতি সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের বরাবরে অবগতিমূলে সংহতি সমাবেশটি আজ সকাল ১০টায় চেঙ্গী স্কোয়ারে হাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে সেনাবাহিনী-বিজিবি-পুলিশ সদস্যরা স্বনির্ভর বাজার, খবংপয্যা, উপালী পাড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া লোকজনকে বাধা দিতে থাকে এবং গাড়ীতে করে টহল জোরদার করে। একপর্যায়ের সেনাবহিনীরা স্বনির্ভর বাজারে দোকানে দোকানে তল্লাশি করে দশবল বৌদ্ধ বিহার এলাকাসহ কয়েকটি জায়গায় পাহাড়িদের বাড়ি ঘর তল্লাশি চালায় ও সাধারণ ছাত্রদের ধরপাকড় করে মারধর এবং অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে। একপর্যয়ের সেনাবাহিনীর সদস্যরা পানছড়ি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র যশোবীর চাকমা (১৭) ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র বিপন চাকমা(১৬) নামে দুই ছাত্রকে মারধর করে আহত করে।
এদিকে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করতে না পারায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া এলাকায় সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
‘ধরপাকড় বন্ধ কর, সভা-সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দাও’ এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে পিসিপি নেতা বিনয়ন, বিপুল ও অনিলসহ কারাবন্দী ইউপিডিএফভুক্ত সকল সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক অনি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, এই সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কার্যকলাপ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। সরকার উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় মৌলবাদী চেতনা লালন করে পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মিছিল মিটিঙে নামলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় হস্তক্ষেপ করে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে।
বক্তারা আরো বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে লেলিয়ে দিয়ে যতই দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র করুক না কেন জনগণ ততই সংগঠিত হয়ে লড়াই সংগ্রামে সামিল হবে।
বক্তারা, সেনাবাহিনী-বিজিবি-পুলিশ প্রশাসনের এসব ঘৃণ্য কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে ফ্যাসিস্ট শাসকচক্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের সকল ছাত্র-যুব-নারী সমাজ সহ মুক্তিকামী সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে অন্যায়ভাবে আটক পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বিনয়ন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল চাকমাসহ নেতা কর্মীদের উপর দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।