সেনা হেফাজতে ডুরন বাবুর মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি পা:চ: কমিশনের

0

সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশন সেনাবাহিনীর হেফাজতে তিমির বরণ চাকমা ওরফে ডুরন বাবুর মৃত্যুর নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

chtcommissionগতকাল শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, এক বিবৃতিতে কমিশনের তিন কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, লর্ড এরিক এভিবুরি ও এলসা স্ট্যামাটোপৌলৌ (Elsa Stamatopoulou) গত ১০ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সশস্ত্র বাহিনীর হেফাজতে ডুরন বাবুর ওপর শারীরিক নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানান।

তারা বলেন, জেএসএস এম. এন. লারমা গ্রুপের সদস্য ডুরন বাবুকে সেনাবাহিনী চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাকে মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

পত্রিকার রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে কমিশনের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন যে, সেনাবাহিনী তার মৃতদেহকে তার পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করে ও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দাহ করে ফেলে। এমনকি এ ব্যাপারে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়নি।

তারা বলেন, “সিভিল প্রশাসনের আওতাধীন আইন শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ভীষণ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে তার সকল অস্থায়ী ক্যাম্প গুটিয়ে ফেলবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব হবে পার্বত্য জেলা পরিষদের।

“শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল হার্ভে লাডসৌস এর সাম্প্রতিক সফর যখন এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশ থেকে আরো শান্তিরক্ষী নিতে আগ্রহী, তখন সেনা সদস্যদের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এ ব্যাপারে তাদের জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি — যা শান্তি রক্ষা কাজের সাথে অসামঞ্জস্য — এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে বলে আমরা উদ্বিগ্ন।

“সশস্ত্র বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সম্পর্কে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করে সম্প্রতি মন্ত্রীসভায় জাতীয় সম্প্রচার নীতি ২০১৪ অনুমোদন সংবাদ মাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আরো একটি আঘাত এবং তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের জন্য একটি দায়মুক্তির আবরণ তৈরি করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।”

“বাংলাদেশ International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) Ges Convention against Torture and other Cruel, Inhuman or Degrading Treatment or Punishment (CAT)  এ স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তাই নির্যাতন নিষিদ্ধ করা ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য কার্যকর প্রতিকারের বিধান করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা রয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকার সংসদে Torture and Custodial Death (Prevention) Act, 2013 পাস করেছে, যাতে হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

“আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে শারীরিক নির্যাতনে (ডুরন চাকমার) মৃত্যুর ঘটনার কার্যকর ও স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক এবং দোষীদের বিচারের আওতায় এনে প্রমাণ সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।”

কমিশন একই সাথে অবিলম্বে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছে।
———-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More