পার্বত্য এলাকায় ভয়-ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি দিয়েছেন খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির জনপ্রতিনিধিরা

0

ঢাকা : পার্বত্য এলাকায় ভয়-ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও জনপ্রতিনিধিদের নামে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।

গতকাল ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার দুপুর ২টার সময় খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা ও লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাসহ ৭ জনের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুণ অর রশিদ বিশ্বাস স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন।

প্রতিনিধি দলে আরো উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ১নং সাবেক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুপন চাকমা, ২নং নানিয়ারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতি লাল চাকমা, ৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমোদ বিকাশ খীসা, ৪নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা ও নান্যাচর এলাকার মুরুব্বী সঞ্চয় চাকমা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা নিহত হওয়ার ঘটনায় উপজেলার ৪ ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোট ১০ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্যকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। শুধু তাই নয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা, লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা ও কুদুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কানন কুসুম চাকমাসহ বিভিন্ন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নিরীহ জনগণের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। হত্যাকা-ের সাথে এভাবে দূরবর্তী জেলা ও উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পাইকারিভাবে জড়ানোর মধ্যে মতলববাজি রয়েছে, তা স্পষ্ট। শক্তিমান চাকমার হত্যাকা-ের সাথে জড়িত করে যাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই নানিয়ারচর উপজেলার বাইরের লোক, এমনকি তারা রাঙ্গামাটি জেলাধীনও নন। ঘটনার সাথে তাদের দূরতম সম্পর্কও কল্পনা করা যায় না’।

এতে আরো বলা হয়, ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকা উত্তপ্ত করার অপতৎপরতা লক্ষ্যণীয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিকল্পিত খুন-খারাবি করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচরসহ বিভিন্ন উপজেলায় সংঘটিত ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নামে মিথ্যা মামলা দায়ের অব্যাহত রেখেছে’।

স্মারকলিপিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন দূরের কথা, সাধারণ নাগরিক হিসেবেও আমরা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম হচ্ছি না’।

স্মারকলিপিতে গত বছর ১৬ নভেম্বর থেকে নানিয়ারচরে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আবির্ভূত হওয়ার পর থেকে এলাকায় খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, চাঁদাবাজিসহ জনজীবনে উৎপাতের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে জনপ্রতিনিধিরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো-

১. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজ সম্পাদনের স্বার্থে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার পূর্বক জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

২। পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কোন সাধারণ নাগরিক নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে অন্যায় ধরপাকড় ও হয়রানির শিকার না হয়, তা সুনিশ্চিত করা হোক।

৩। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান অর্থবহ করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি ও ধরপাকড় বন্ধ করা হোক।

৪। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের সম্মানিত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।

৫। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শক্তিমান চাকমা, ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা, অনাদি রঞ্জন চাকমা, অনল বিকাশ চাকমা(প্লুটো)সহ সকল হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
————————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More